বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাঙামাটি: শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার আবাসিক হোটেল ‘গোল্ডেন হিল’-এর ৫ নম্বর কক্ষ থেকে এক নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত নারীর প্রকৃত নাম মুন্না আক্তার (৪০)। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। তবে হোটেলের রেজিস্টারে তাঁর নাম লেখা হয়েছিল ‘মুন্না সরকার’ এবং ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল ঢাকার ধানমন্ডি।
রোববার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ হোটেলের কক্ষ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় নিহতের পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট ও শরীরে ছিল শার্ট। মরদেহটি খাটে অর্ধশোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
সন্দেহজনক ভূমিকা ম্যানেজারের
হোটেলের ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন জানান, ২৬ জুলাই ওই নারী হোটেলে উঠেছিলেন। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে দরজা ভেঙে নামিয়ে আনেন। কিন্তু রাত দেড়টার পর পুলিশকে জানানো হয়, যার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখা দিতে পারেননি তিনি। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশে খবর দেওয়ার বিষয়টি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
ওই ঘটনার পরপরই পুলিশ কুতুব উদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি স্বীকার করেছেন, হোটেলটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মূছা মাতুব্বরের ভাইদের মালিকানাধীন হলেও তিনিই সেটি ভাড়ায় পরিচালনা করতেন।
পরিচয় গোপন, আগেও এসেছিলেন রাঙামাটিতে
মৃত নারীর স্বামী পরিচয়দানকারী আবদুল কাদের, কন্যা সাদিয়া আক্তার বৃষ্টি ও মা মমতাজ বেগম চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। তাঁরা জানান, মুন্না আক্তার এর আগেও অন্তত তিনবার রাঙামাটিতে এসেছিলেন এবং প্রতিবারই গোল্ডেন হিল হোটেলেই অবস্থান করেছিলেন। হোটেল ম্যানেজার কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল বলেও জানান স্বজনেরা। তবে তিনি কী কাজ করতেন, তা তারা জানতেন না।
হোটেলে গোপন পতিতা ব্যবসার প্রমাণ
ঘটনার তদন্তে গিয়ে পুলিশ একই হোটেলের ১২ নম্বর কক্ষ থেকে এক পতিতা ও এক খদ্দেরকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে খদ্দের জানান, হোটেল ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন তিন হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে ওই নারী সরবরাহ করেছিলেন। কুতুব নিজেও স্বীকার করেছেন, রাঙামাটির পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক বোটওয়ালা তাঁকে এসব নারী সরবরাহ করে।
পুলিশ জানায়, হোটেলটির রেজিস্ট্রারে আগতদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য লিপিবদ্ধ করার বিধান থাকলেও, মুন্না আক্তারের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন রেজিস্ট্রার খাতা থানায় সিল করিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও, এই হোটেলে সপ্তাহে মাত্র একবার তা করা হতো। স্থানীয়রা জানিয়েছে, হোটেলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে পতিতা ব্যবসা পরিচালনা করছিল কুতুব উদ্দিন। মার্কেট এলাকায় সিসি ক্যামেরা থাকায় প্রশাসন আগেই চলে এলে তিনি ক্যামেরায় দেখে পতিতাদের লুকিয়ে ফেলতেন।
পুলিশের বক্তব্য
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহেদ উদ্দিন বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”