Home অন্যান্য শুক-পাখির রূপকথা

শুক-পাখির রূপকথা

রাজকন্যা ও অদ্ভুত পাখি:

অনেক অনেক দিন আগে, এক ছিল রাজা। তাঁর ছিল একমাত্র কন্যা, নাম মণিমালা। রাজ্যের সব মানুষ বলত—“এমন সুন্দর রাজকন্যা আগে কেউ কখনো দেখেনি!” কিন্তু রাজকন্যা ছিল একেবারে অন্যরকম। সে শুধু সৌন্দর্যে নয়, জ্ঞানে, সাহসে আর ভালোবাসায় ছিল সবার চেয়ে আলাদা।

একদিন সে বনের ধারে হাঁটতে গিয়ে এক আলাদা রকম পাখি দেখতে পেল। দেখতে অনেকটা শুক-পাখির মতো, কিন্তু তার চোখে ছিল আলো, গলায় ছিল রুপালি ঘণ্টার মতো শব্দ। রাজকন্যা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি মানুষের কথা বুঝতে পারো?”

পাখি মৃদু কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, রাজকন্যা। আমি জাদুর শুক। আমি মনের কথা শুনতে পারি, আর বার্তা পৌঁছে দিতে পারি দূর দূর দেশে।”

রাজকন্যা হেসে উঠল, “তুমি কি আমার গোপন কথাগুলো একজন বিশেষ বন্ধুকে পৌঁছে দিতে পারবে?”

পাখি মাথা নেড়ে বলল, “পারব, যদি তা সত্য ভালোবাসা হয়।”

বার্তা যায় ভালোবাসার কাছে:

রাজকন্যা তার গোপন কথা শুক-পাখির কানে ফিসফিস করে বলত। আর সেই পাখি উড়ে চলে যেত দূরের এক পাহাড়ি গ্রামে, যেখানে থাকত এক তরুণ নাম তার সুশীল। সে ছিল গরিব, কিন্তু দয়ালু ও জ্ঞানী। সে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি, এমন এক পাখি তার কাছে বার্তা আনছে! কিন্তু রাজকন্যার কথায় ছিল এমন মায়া, এমন জ্যোৎস্নার আলো, যে সেও ভালোবেসে ফেলল রাজকন্যাকে দেখা না হয়েও।

পাখি প্রতিদিন উড়ে যেত এক দিন এক কবিতা, আরেক দিন এক ফুলের গল্প, কখনো মেঘের পেছনে লুকানো ভালোবাসা। সারা রাজ্য জানত না, কিন্তু দুটি মন পাখির ডানায় ভেসে একত্র হয়েছিল।

কিন্তু… সুখের দিন বেশি দিন থাকে না।

রাজকন্যার কুঞ্চিত ভ্রু চেয়ে ছিল রাজদরবারের এক মন্ত্রী—লোভী, হিংসুটে। সে রাজকন্যাকে পেতে চেয়েছিল, কিন্তু বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। একদিন সে শুক-পাখির কথা জানতে পেরে পাখিকে ফাঁদে ফেলে ধরে ফেলে।

কান্না, মুক্তি আর মিলন:

পাখিকে বন্দি করে ফেলে এক সোনার খাঁচায়। সে আর কথা বলে না, শুধু চেয়ে থাকে রাজকন্যার দিকে। রাজকন্যা খুঁজতে খুঁজতে পায় সেই পাখিকে—নিঃশব্দ, নির্জীব। সে কাঁদতে থাকেআস্তে আস্তে ফোঁটায় ফোঁটায়।

ঠিক তখন এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে রাজকন্যার চোখের এক ফোঁটা অশ্রু পাখির গায়ে পড়তেই, পাখি ডানা ঝাপটাতে থাকে! সে বলল, “রাজকন্যা, তুমি সত্যিকারের ভালোবাসো। এবার আমি সত্য প্রকাশ করব।”

সবার সামনে পাখি বলে দেয় মন্ত্রীর কুকর্ম, আর সেই তরুণ সুশীলের কথা, যে সত্যিকারের প্রেমিক। রাজা কেঁদে ফেলেন আনন্দে। তিনি বলেন, “সত্যিকারের ভালোবাসার জয় হোক।”

রাজকন্যা ও সুশীলের রাজকীয় বিয়ে হয়। আর সেই শুক-পাখি? সে থেকে যায় তাদের প্রাসাদে, বারান্দায় বসে রোজ গল্প বলেভালোবাসার, বন্ধুত্বের, আর সাহসের।

📚 এই গল্পে আমরা যা শিখি:

সত্যিকারের ভালোবাসা সব বাধা পেরিয়ে জয়ী হয়

বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস সব চেয়ে বড় শক্তি

দয়ালু মন সবসময় আশীর্বাদ পায়