Home কৃষি রাজশাহীর আম বাগানে তাপপ্রবাহের করাল ছোবল: ফলন কমার আশঙ্কা, হতাশ চাষিরা

রাজশাহীর আম বাগানে তাপপ্রবাহের করাল ছোবল: ফলন কমার আশঙ্কা, হতাশ চাষিরা

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহীি: রাজশাহীর সুস্বাদু আমের স্বাদ নিতে অপেক্ষায় দেশের ভোক্তারা। মে মাসের শেষেই বাজারে আসার কথা ছিল রাজশাহীর বিখ্যাত গোপালভোগ, লক্ষণভোগসহ নানা জাতের আম। শুরুতে ভালো ফলনের ইঙ্গিত পেয়ে খুশিতে ছিল রাজশাহীর আমচাষিরা। কিন্তু চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে সেই আশায় এবার জল ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতি। বাগানজুড়ে আমের গুটি ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজশাহী জেলার প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চলমান খরায় সেই লক্ষ্যমাত্রা এখন হুমকির মুখে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বর্তমানে জেলার তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। দীর্ঘদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে থাকায় এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি কয়েকদিন স্বল্পমাত্রার বৃষ্টি ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাটি ও গাছ উভয়ই চরম খরার কবলে পড়েছে।

বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, পবা, হরিয়ান, পারিলা, শ্যামপুর, বুধপাড়া—এসব এলাকার অনেক আমচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ গাছে যেসব মুকুল থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত গুটি তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর বড় একটি অংশ এখন ঝরে পড়ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, তাপপ্রবাহের ফলে আমগাছের বোটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে গুটি ঝরে পড়ছে। যদিও চাষিদের গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া এবং গুটিতে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তবে প্রকৃতির কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পবা উপজেলার আমচাষি শামসুজ্জামান বলেন,
“আগে কালবৈশাখী ঝড় দেখেছি, কিন্তু খরার মধ্যে যদি ঝড় আসে তাহলে আমের বোটা শুকিয়ে যায়, ফলত ক্ষতির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”

অন্যদিকে, বাগান লিজ নিয়ে আম চাষ করছেন আব্দুর রাজ্জাক। তার কথায়,
“মুকুল দেখে আশা করেছিলাম ঋণ শোধ করব, কিছু লাভও করব। কিন্তু এখন যে হারে গুটি ঝরছে, তাতে হতাশা ঘিরে ধরেছে। অনেক চেষ্টা করছি, তবু মনে হচ্ছে শেষ রক্ষা হবে না।”

আরেক চাষি মনি মিঞা জানান, ছোট গাছে পানি স্প্রে করে গুটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে বড় গাছে পানি ছিটাতে শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

চাষিরা এখন আশায় বুক বেঁধেছেন এক পশলা বৃষ্টির জন্য, যা তাদের বাগান ও স্বপ্ন দুটোকেই বাঁচাতে পারে। প্রকৃতির অনুকূলতায় যদি দ্রুত পরিবর্তন না আসে, তাহলে এবারের মৌসুমে রাজশাহীর বিখ্যাত আমের সরবরাহ ও দাম—দুয়ো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।