বিজনেসটুডে২৪ প্র্রতিনিধি, গোলাপগঞ্জ,( সিলেট): টানা ভারী বর্ষণে গভীর রাতে যখন ঘুমে অচেতন এক পরিবার, ঠিক তখনই পাহাড়ি মাটি গড়িয়ে মাটিচাপা পড়ে গেল তাদের স্বপ্ন, জীবন ও ভবিষ্যৎ। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট গ্রামে রবিবার ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে টিলা ধসে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন একই পরিবারের চারজন।
যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা হলেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইয়াজ উদ্দিন, তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। রাতভর বর্ষণ আর বয়ে চলা ঝড় এক নিঃশব্দ মৃত্যুর ছায়া টেনে এনেছে এই শান্ত গ্রামে। ঘুমন্ত পরিবারের ওপর আচমকাই ধসে পড়ে পেছনের টিলা। চোখের পলকেই তাদের ঘর মাটি চাপা হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানালেন, খবর পেয়েই তারা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু খালি হাতে মাটি খুঁড়ে একজনকেও উদ্ধার করতে না পেরে, শেষ ভরসা হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভোর ৪টার দিকে। তখনও চলছিল মুষলধারে বৃষ্টি, রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গাছ পড়ে, জলাবদ্ধতায় আটকে ছিল যানবাহন।
ততক্ষণে ইয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী ও দুটি শিশুসন্তানের নিথর দেহ মাটির নিচ থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায়নি পরিবারের কর্তা ইয়াজ উদ্দিনকে।
লক্ষনাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খলকু বলেন, ‘এই রাতটি আমাদের ইউনিয়নের জন্য এক গভীর শোকের রাত। কতটা অসহায় হলে মানুষ মাটিচাপা পড়ে থাকতে পারে, আর সাহায্য পৌঁছায় না!’
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অনেকবার চেষ্টা করেও প্রশাসনের সাড়া মেলেনি দ্রুত। নিজের জীবন বাজি রেখে যারা উদ্ধার কাজ করছিলেন, তারাও হাল ছেড়ে দেন যখন আবারও টিলা ধসে পড়ে আহত করার আশঙ্কা দেখা দেয়।
ফায়ার সার্ভিস সিলেট তালতলা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গাছ পড়ে যাওয়ায় সময় লেগেছে পৌঁছাতে। তবুও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বাকি নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে।
একই রাতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌধুরীবাজার ও বিয়ানীবাজার এলাকাতেও টিলা ধসের খবর এসেছে। ভাগ্য ভালো, সেসব এলাকায় হতাহতের খবর নেই।
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোর ঝুঁকি কতটা মারাত্মক। প্রশাসনের উচিত এসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে এভাবে আর কোনো পরিবার নিঃশেষ না হয়।
➤ আপনি যদি পাহাড়ি জনপদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, শেয়ার করুন এই প্রতিবেদন।