হেলথ ডেস্ক:
রোগটি নিঃশব্দে শুরু হতে পারে হালকা ব্যথা, আঙুলে ফোলাভাব কিংবা সকালে একটু জড়তা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট রিউমাটোলজিস্ট টামি এল শ্লোটজহাওয়ারের জন্য রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের (RA) সূচনা ছিল বজ্রপাতের মতো।
২০১৬ সালের এক সকালে হঠাৎ তার কাঁধ ও কোমরে এত ব্যথা শুরু হয় যে তিনি বিছানা থেকেও উঠতে পারছিলেন না। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে রোগটি নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসা করলেও, নিজের ওপর এর প্রথম প্রভাব নিয়ে তিনি তখন নিশ্চিত ছিলেন না। একাধিক রক্ত পরীক্ষার পরও প্রথমে রোগ শনাক্ত হয়নি, যেমনটা অনেক RA রোগীর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
টামির কোনও পারিবারিক ইতিহাস ছিল না, ধূমপান বা স্থূলতা কিংবা পরিবেশগত ঝুঁকিও ছিল না। তবে স্ত্রীর ক্যানসারে মৃত্যুর পরের মানসিক চাপ, দুঃখ, অনিদ্রা ও অপুষ্টিই সম্ভবত তার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আঘাত করেছিল। আর এ থেকেই শুরু হয় তার নিজস্ব রোগযাত্রা।
তবে অভিজ্ঞ সহকর্মীর সহায়তায় দ্রুত শুরু হয় চিকিৎসা। প্রথমে প্রেডনিসন দেওয়া হলেও, পরে ধাপে ধাপে অন্যান্য ওষুধ দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। টামি জোর দিয়ে বলেন, RA-র ক্ষেত্রে প্রথমেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ দেরি হলে জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষতি হয়।
তবে ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারায় পরিবর্তনও ছিল টামির সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। দুঃখকে মোকাবেলা করে তিনি শুরু করেন হালকা ব্যায়াম, খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন ও নিয়মিত ঘুমের চেষ্টা। আজ আট বছর পরও তিনি RA নিয়ে প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন, সঙ্গী করেছেন পুরনো বাদ্যযন্ত্র শেখা ও সংস্কারের মতো নতুন শখ।
টামির মতে, RA নিয়েও ভালো থাকা সম্ভব, তবে তার জন্য প্রয়োজন কিছু সচেতন পদক্ষেপ। নিচে দেওয়া হলো RA নিয়ন্ত্রণে তার মূল পরামর্শ:
১. খাদ্যতালিকা ঠিক রাখা
ফলমূল, শাকসবজি ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। লাল মাংস এড়িয়ে মাছ বা নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ উপকারী। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি কমাতে হবে।
২. চা পান, অ্যালকোহল নয়
সবুজ চা RA-এর ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে অ্যালকোহল উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ওষুধের কার্যকারিতা কমায়।
৩. চাপ কমানো শিখুন
মানসিক চাপ RA-র শত্রু। প্রতিকূল অবস্থার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে।
৪. ধূমপান পরিহার করুন
RA হওয়ার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়ে ধূমপানের কারণে। এটি রোগের জটিলতা বাড়ায় এবং চিকিৎসা কঠিন করে তোলে।
৫. ব্যায়াম করুন
তৈরি থাকুন শারীরিকভাবে। সাঁতার, হাঁটা, যোগব্যায়াম বা চিগং উপকারী। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
৬. ঘুমে ছাড় নয়
কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুম RA রোগীদের জন্য আবশ্যক। ব্যথা উপশমে গরম পানিতে গোসল বা হিট প্যাচ কাজে আসতে পারে।
৭. মুখের যত্ন নিন
দাঁতের সমস্যা RA-র ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস ও স্কেলিং দরকার।
৮. যৌন সমস্যা গোপন নয়
যৌন জীবনে সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আগেই প্রস্তুতি নিলে শারীরিক সম্পর্কও সুখকর হতে পারে।
টামি বলেন, “আমি সত্যিই বিশ্বাস করি—এই রোগ আমাকে আরও সহানুভূতিশীল চিকিৎসক করেছে।” তার মতে, RA-র বিরুদ্ধে লড়াই শুধু ওষুধে নয়, মন ও জীবনধারায়ও জয় সম্ভব।