Home গাড়িবাজার মধ্যবিত্তের গাড়ি এখন সোনার হরিণ, রিকন্ডিশন্ডেও স্বস্তি নেই

মধ্যবিত্তের গাড়ি এখন সোনার হরিণ, রিকন্ডিশন্ডেও স্বস্তি নেই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারে জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশটি প্রায় ১৫ লাখ ৭০ হাজার ইউনিট পুরোনো গাড়ি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ বেশি। জাপানের “শাকেন আইন” অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন নবায়নের জন্য উচ্চ ফি পরিশোধ করতে হয়। ফলে ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই গাড়ির মালিকরা তা বিক্রি করে দেন। এই ব্যবস্থার কারণে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে।

এই গাড়িগুলোর বড় একটি অংশ গমন করে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, পাকিস্তান ও চিলির মতো উন্নয়নশীল দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম ক্রেতা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জাপান থেকে রপ্তানি হওয়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৬ হাজার ২শ ইউনিট, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মূলত উচ্চমূল্যের নতুন গাড়ির বিকল্প হিসেবে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে এসব পুরোনো গাড়ির চাহিদা বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশে আমদানিকৃত এসব গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো টয়োটা। বিশেষ করে প্রিমিও, এক্সিও, ফিল্ডার, নোয়াহ, ভক্সি, হারিয়ার ও প্রাডোর মতো গাড়িগুলোর চাহিদা বেশি। এই গাড়িগুলো সাধারণত জাপানে ব্যবহারের পর বিশেষ কারিগরি প্রক্রিয়ায় রিকন্ডিশন করে রপ্তানি করা হয়। এর আগে অবশ্য জাপানের অটো অ্যাপ্রেইজাল ইনস্টিটিউট (JAAI) থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক।

তবে বাংলাদেশে এসব গাড়ির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক ও কর আরোপের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি, শুল্ক কাঠামোর পরিবর্তন এবং কাস্টমস প্রক্রিয়ার জটিলতা এ খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত গাড়ি আমদানি করেন, তারা বলছেন—অর্থনৈতিক চাপে নতুন গাড়ির বিকল্প হলেও এখন রিকন্ডিশন্ড গাড়িও অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিকভাবে জাপানের রপ্তানি প্রবণতায় কিছু অঞ্চলিক পরিবর্তনও এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক যুদ্ধ এবং ইউরোপের পরিবেশবিষয়ক বিধিনিষেধের কারণে জাপানের পুরোনো গাড়ির প্রধান বাজার এখন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ সেই দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

এদিকে, জাপানের বিভিন্ন রপ্তানিকারক কোম্পানি যেমন SBT, Be Forward, এবং EveryCar সম্প্রতি বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য সরাসরি অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এতে গ্রাহকরা জাপান থেকে সরাসরি গাড়ি নির্বাচন করে কিনতে পারছেন, ফলে মধ্যস্বত্বভোগী কমে যাওয়ায় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যদি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করে এবং শুল্ক কাঠামোতে স্বচ্ছতা আনে, তবে এই খাত থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পাওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে মধ্যবিত্ত ক্রেতারাও তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের গাড়ি কিনতে পারবেন।

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে বাজারে নতুন গাড়ির দাম যেভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, সেখানে রিকন্ডিশন্ড গাড়িই এখন ক্রেতাদের জন্য কার্যকর বিকল্প। জাপানের এই রপ্তানি প্রবণতা তাই বাংলাদেশের অটোমোবাইল খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে এবং ভবিষ্যতেও তা বহাল থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।