Home অন্যান্য নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রপ্তানি বাড়ছে জাপানি হাইব্রিড ও ইভি গাড়ির

নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রপ্তানি বাড়ছে জাপানি হাইব্রিড ও ইভি গাড়ির

ইউই হোশিকো, টোকিও:  বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহৃত গাড়ির আমদানি-নিয়মেও পরিবর্তন আসছে। অনেক দেশেই এখন পরিবেশগত বিধিনিষেধ, কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত সীমা ও ড্রাইভিং সিস্টেম সংক্রান্ত কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে জাপান থেকে রপ্তানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে। তবুও আশার কথা, এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভবিষ্যতের রপ্তানি প্রবণতা ইতিবাচকই রয়ে গেছে।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষত ইউরোপ ও আফ্রিকার বাজারে এখন ৮ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর ফলে জাপানের পুরোনো মডেলের বহু রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এইসব বাজারে আর পাঠানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি ডান পাশে স্টিয়ারিং (right-hand drive) গাড়ি আমদানিতেও রয়েছে কঠোর সীমাবদ্ধতা। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই বাম পাশে স্টিয়ারিং বাধ্যতামূলক। ফলে এসব দেশে রপ্তানির জন্য গাড়ি কনভার্সন প্রয়োজন হয়, যা ব্যয়বহুল ও জটিল।

তবে এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আশার সঞ্চার করছে জাপানি হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক (ইভি) রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা। উন্নত প্রযুক্তির কারণে জাপানে প্রতি বছর প্রচুর নতুন হাইব্রিড ও ইভি গাড়ি বাজারে আসছে, ফলে আগের ব্যবহৃত গাড়িগুলোর রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানি হাইব্রিড গাড়ি যেমন টয়োটা প্রিয়াস, ফিট হাইব্রিড কিংবা নিশান লিফ ইভি– এসব এখনো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ এরা জ্বালানি সাশ্রয়ী, কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচে দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। সেইসঙ্গে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকরাও ‘গ্রিন ভেহিকল’ ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছেন, ফলে আগামীতে এ খাতেই রপ্তানির গতি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাপান থেকে গাড়ি রপ্তানিকারক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রপ্তানি হওয়া ব্যবহৃত গাড়ির মধ্যে হাইব্রিড ও ইভি গাড়ির অনুপাত আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশেও এখন হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কারণ জ্বালানির দামে অস্থিরতা এবং ট্যাক্সে আংশিক ছাড়– দুটোই মানুষকে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের দিকে আগ্রহী করে তুলেছে।

তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বৈধ রপ্তানির কাঠামো ও কাস্টমস প্রক্রিয়া নিয়ে। বিভিন্ন দেশে ইভি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির জন্য নির্ধারিত নতুন মানদণ্ড ও ব্যাটারির স্থায়িত্বসংক্রান্ত প্রশ্ন এখনো আমদানিতে জটিলতা তৈরি করছে। বিশেষ করে আফ্রিকার কিছু দেশে পুরোনো ব্যাটারি চালিত গাড়ি আমদানিতে কঠোরতা রয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মূলত আন্তর্জাতিক পরিবেশনীতি, কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মান ও ব্যাটারির স্থায়িত্বের ওপর। তবে সম্ভাবনা এখনো অনেক। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বাজারে হাইব্রিড ও ইভি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির রপ্তানি আজ নতুন বাস্তবতার মুখে। একদিকে পরিবেশগত বিধিনিষেধ ও ডানপাশে স্টিয়ারিং সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা রপ্তানিতে বাধা তৈরি করছে, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। জাপানি গাড়ির মান, জ্বালানি দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এই খাতকে আগামীতেও বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রপ্তানি বাজারে পরিণত করবে বলেই আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

🔔 আপডেটেড থাকুন!
 আরও বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন পেতে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম -এ।