Home Second Lead নগরায়ণ ও ক্রেতার চাহিদায় প্রসারিত হচ্ছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার

নগরায়ণ ও ক্রেতার চাহিদায় প্রসারিত হচ্ছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চলতি ২০২৫ সালে বাংলাদেশের রিকন্ডিশন্ড বা ব্যবহৃত গাড়ির বাজার নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান Mordor Intelligence-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে দেশের ব্যবহৃত গাড়ির বাজারের আয়তন প্রায় ১.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে ২০২৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই খাতের বাৎসরিক গড় প্রবৃদ্ধি হার আনুমানিক ৭.১০ শতাংশ হতে পারে।
একই সময়ে 6Wresearch সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৫ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যবহৃত গাড়ির বাজার প্রায় ৬.৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন গাড়ির দাম লাগাতার বেড়ে যাওয়া, বিদেশি মুদ্রা সংকট এবং উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ক্রমশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন গাড়ি আমদানিতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কাস্টমস শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট সারচার্জ প্রযোজ্য হয়। ফলে নতুন গাড়ি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অপরদিকে জাপান, সিঙ্গাপুর বা যুক্তরাজ্য থেকে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি তুলনামূলক কম দামে মানসম্পন্ন বিকল্প দিচ্ছে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন বারভিডা-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ২১,৩৩৭টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় সংখ্যা কিছুটা কম হলেও বাজারের সার্বিক স্থিতিশীলতা বজায় আছে। এই সময়ে সরকারের রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ৩,৮৬৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ছয় শতাংশ কম। বারভিডা মনে করছে, আমদানি শুল্ক কমানো ও অবচয় সুবিধা বাড়ালে বাজারে আরও প্রবৃদ্ধি সম্ভব।

বারভিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেছেন, “সরকার যদি অবচয়ের সুবিধা ৫০ শতাংশে উন্নীত করে এবং আমদানির বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত করে দেয়, তাহলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে আগামী দুই বছরে দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নগরায়ণ বৃদ্ধি, পরিবারপ্রতি আয় বৃদ্ধি এবং অনলাইন গাড়ি বিক্রয় প্ল্যাটফর্মের প্রসার বাংলাদেশের ব্যবহৃত গাড়ির বাজারকে শক্তিশালী করছে। ব্যবহৃত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম, যন্ত্রাংশ সহজলভ্য, এবং পুনরায় বিক্রয়মূল্য ভালো থাকায় এটি ক্রেতাদের কাছে একটি সাশ্রয়ী ও বুদ্ধিমানের বিকল্প হয়ে উঠছে।

সরকার সম্প্রতি “ইলেকট্রিক ভেহিকল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২৫” ঘোষণা করেছে। এতে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানির সুযোগ আরও বিস্তৃত হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যানবাহনের চাহিদা দ্রুত বাড়বে, যা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারকে আরও শক্তিশালী করবে।

তবে উচ্চ শুল্ক, ডলারের সংকট এবং ৫ বছরের আমদানি বয়সসীমা বাজারের বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। বারভিডা বারবার এই সীমাবদ্ধতাগুলো শিথিল করার আহ্বান জানালেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এছাড়া ক্রেতাদের মধ্যে গাড়ির অবস্থা, মান ও গ্যারান্টি নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি শিল্প এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের মুখে। Mordor Intelligence ও 6Wresearch-এর তথ্য বলছে, সব বাধা সত্ত্বেও এই বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। সঠিক নীতিগত সহায়তা ও শুল্ক কাঠামোর সংস্কার হলে, আগামী দশকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি দেশের অটোমোবাইল খাতের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।