Home Second Lead সূর্যের শক্তিকে ছাদে বন্দীর মহাপরিকল্পনা

সূর্যের শক্তিকে ছাদে বন্দীর মহাপরিকল্পনা

জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি: পর্ব-১

সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার বিপ্লব: ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০০০ মেগাওয়াটের মহাযজ্ঞ

কামরুল ইসলাম, ঢাকা: দেশে গ্যাস সংকট ও আমদানি নির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থার চাপ বাড়তে থাকায় সরকার নবায়নযোগ্য শক্তিকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের রূপান্তরের পথে হাঁটছে। সেই রূপান্তরেরই প্রধান ধাপ ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’, যার লক্ষ্য  চলতি বছরের মধ্যেই সরকারি ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে জাতীয় গ্রিডে ৩,০০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যোগ করা।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক পরিপত্রে বলা হয়, দেশের বর্তমান সৌরবিদ্যুতের অবদান মাত্র ৫.৬ শতাংশ (১,৫৬৩.৭ মেগাওয়াট), যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। একই সময়ে ভারত ২৪ শতাংশ, পাকিস্তান ১৭.১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌর উৎস থেকে পাচ্ছে।

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫৬ শতাংশই এখনো প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর। গ্যাসের মজুদ দ্রুত কমে আসায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। সরকার তাই সৌরশক্তিকে বিকল্প নয়, বরং অপরিহার্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে। রুফটপ সোলার কর্মসূচির মাধ্যমে শহর ও জেলা পর্যায়ের হাজার হাজার সরকারি ভবন এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ছাদকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতেই এ পরিকল্পনা।

এই কর্মসূচির বাস্তবায়নে দুটি পৃথক মডেল অনুসরণ করা হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে Capex মডেলে সরকার নিজস্ব ভবনে বিনিয়োগ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে আলাদা আবেদন প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালগুলোতে Opex মডেলে বেসরকারি বা বিতরণ কোম্পানি বিনিয়োগ করবে, আর প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অর্থ ব্যয় ছাড়াই ছাদে সোলার সুবিধা পাবে। বিদ্যুৎ বিলেও সাশ্রয় হবে নেট মিটারিং ব্যবস্থায় তিন মাস পরপর উৎপাদিত ও ব্যবহৃত বিদ্যুতের হিসাব সমন্বয় করে।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের গতি নিশ্চিত করতে পরিপত্রে স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিতরণ সংস্থা—ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকোসহ অন্যান্যরা হেল্প ডেস্ক চালু করেছে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত আবেদন ও কারিগরি সহযোগিতা পেতে পারে।

কর্মসূচিটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াবে না, বরং দেশের জ্বালানি ব্যয়ের ওপর চাপও কমাবে বলে সরকারের ধারণা। নবায়নযোগ্য শক্তিতে এ ধরনের বৃহৎ উদ্যোগ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে। রুফটপ সোলার কর্মসূচি সফল হলে দেশের শহর ও গ্রামে সরকারি-অসরকারি ভবনের ছাদকে শক্তির নতুন উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। আগামী পর্বে বিশ্লেষণ করা হবে কেন গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এবং কীভাবে সোলার কর্মসূচি সেই সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখছে।

* এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য নিচে জানান।