জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি: পর্ব-২
গ্যাস সংকট ও জ্বালানি নিরাপত্তার হুমকি: কেন সোলার এখন বাংলাদেশের অবশ্যম্ভাবী পথ
কামরুল ইসলাম, ঢাকা: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসনির্ভর। বর্তমানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৫৬ শতাংশই প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আসে। একসময় দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকেই এই চাহিদা পূরণ করা যেত, কিন্তু গত এক দশকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়া, অনুসন্ধান কার্যক্রমের ধীরগতি এবং আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে।
এই সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। শিল্পোৎপাদন থেকে গৃহস্থালি, সব ক্ষেত্রেই গ্যাসের ঘাটতি ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণ সৃষ্টি করছে। উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, কারণ আমদানি করা এলএনজি এবং জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু গ্যাসের প্রাপ্যতা কমছে—এই ভারসাম্যহীন অবস্থাই সরকারকে টেকসই বিকল্প শক্তির পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই রুফটপ সোলার কর্মসূচির ঘোষণা আসে। সৌরশক্তি বাংলাদেশের জন্য শুধু বিকল্প উৎস নয়, বরং ভবিষ্যৎ শক্তি নিরাপত্তার মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত কমছে এবং দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রায় সারা বছর সূর্যালোক পাওয়া যায়। ছাদ ব্যবহার করায় অতিরিক্ত জমির প্রয়োজনও হয় না। ফলে সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মতো বড় বড় ভবনের ছাদগুলো বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ৫.৬ শতাংশ। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো সৌরবিদ্যুতে বিপুল অগ্রগতি দেখিয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে ২৪ শতাংশ, পাকিস্তান ১৭.১৬ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা ৩৯.৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌর উৎস থেকে পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য সৌরভিত্তিক উৎপাদন শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং কৌশলগতভাবেও জরুরি।
রুফটপ সোলার কর্মসূচি সফল হলে বছরের পর বছর ধরে গ্যাস আমদানির জন্য ব্যয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে। একদিকে গ্যাসের ব্যবহার কমবে, অন্যদিকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে অতিরিক্ত ৩,০০০ মেগাওয়াট পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ। এটি শুধু লোডশেডিং কমাবে না, বরং সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ ব্যয়ও কমিয়ে দেবে।
বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে এই বড় রূপান্তর বাংলাদেশের শক্তি-নীতিতে নতুন মোড় আনার ইঙ্গিত দেয়। গ্যাস সংকট দীর্ঘমেয়াদে আরও প্রবল হবে—এটি এখন স্পষ্ট। তাই রুফটপ সোলার কর্মসূচি দেশের জন্য একটি তাৎক্ষণিক সমাধান যেমন, তেমনি একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা কৌশলও।
পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা হবে Capex–Opex মডেলের বাস্তবায়ন কৌশল এবং কীভাবে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানে ছাদভিত্তিক সোলার স্থাপনের কার্যপ্রক্রিয়া এগোবে।
লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!










