জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি: পর্ব-৩
বাস্তবায়ন মডেল: সরকারি কার্যালয় থেকে স্কুল-হাসপাতাল পর্যন্ত
কামরুল ইসলাম, ঢাকা: বাংলাদেশে রুফটপ সোলার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার দুটি ভিন্ন মডেল গ্রহণ করেছে-ধনমূল্য বিনিয়োগ এবং পরিচালনামূলক বিনিয়োগ। এই দুই মডেলের সংমিশ্রণ দেশের সরকারি ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ছাদকে শক্তির নতুন উৎসে রূপান্তর করার পরিকল্পনাকে কার্যকর করছে।
ধনমূল্য বিনিয়োগ মডেল: সরকারি অফিসের জন্য বিনিয়োগ
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ভবনে সরাসরি বিনিয়োগ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়ন ব্যবহার হবে, এবং ভবনের মালিকানা ও সোলার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই মডেল বেছে নেওয়ার কারণ হলো, দীর্ঘমেয়াদে সরকারি অফিসের বিদ্যুতের ব্যয় কমানো এবং অতিরিক্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা।
পরিচালনামূলক বিনিয়োগ মডেল: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সুবিধা
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালগুলোতে পরিচালনামূলক বিনিয়োগ মডেল অনুসরণ করা হবে। এখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো প্রাথমিক অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগ করবে, এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের এক অংশ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করবে, বাকি গ্রিডে যাবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিল কমে যাবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভের অংশ নেবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলো ব্যয় ছাড়াই নবায়নযোগ্য শক্তিতে যুক্ত হতে পারবে।
নেট মিটারিং পদ্ধতি
উভয় মডেলের জন্য নেট মিটারিং ব্যবহৃত হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর গ্রিড থেকে ব্যবহার করা বিদ্যুৎ এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের হিসাব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল করা হবে। এটি নিশ্চিত করবে, উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ পূর্ণরূপে কাজে লাগছে এবং সরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া
কার্যক্রম শুরু করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ একটি ওয়েব অ্যাপ চালু করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন জমা দিতে পারবে। বাজেট অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে, প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হবে এবং কার্যাদেশ দেওয়া হবে। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিতরণ সংস্থা হেল্প ডেস্ক পরিচালনা করছে, যাতে আবেদন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দ্রুত পাওয়া যায়।
এই মডেল দুটি শুধু বিদ্যুতের সাশ্রয় ও নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধি করবে না, বরং সরকারের বৃহৎ লক্ষ্য—৩ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন-কাজে লাগবে। আগামী পর্বে আলোচনায় থাকবে কর্মসূচির অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব।










