আজহার মুনিম, লন্ডন: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী যুক্তরাজ্যের গৃহহীন বিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। উত্তর লন্ডনে অবস্থিত তার মালিকানাধীন একটি বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে ভাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে নতুনভাবে তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠার পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কীর স্টারমারের মন্ত্রিসভায় গৃহহীন ও গণতন্ত্র বিষয়ক পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি। তিনি তার পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি ঘটনা সরকারের কাজের প্রতি মানুষের মনোযোগ থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারে। তাই তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন যাতে সরকার তার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, উত্তর লন্ডনে তার চার শোবার ঘর বিশিষ্ট বাড়িটির আগের ভাড়াটিয়াদের চার মাসের নোটিশে উচ্ছেদ করার পর তিনি বাড়িটির ভাড়া মাসিক ৩০০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৪০০০ পাউন্ডে তালিকাভুক্ত করেন। যা প্রায় ২১ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সমান। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেক বিষয়টিকে অবিশ্বাস্য কর্তৃপক্ষহীনতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী যিনি গৃহহীনতা রোধে দায়িত্বে রয়েছেন, তিনিই ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে ভাড়া বাড়িয়ে নিজের লাভের পথ সুগম করছেন, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
ব্রিটেনের হাউজিং রাইটস চ্যারিটি সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশে বিদ্যমান ভাড়াটিয়া নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতাকে আরো তীব্র করে তোলে এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন করে।
প্রধানমন্ত্রী কীর স্টারমার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রুশনারা আলীর কাজের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, সরকার জনগণের স্বার্থে আরও স্বচ্ছভাবে কাজ চালিয়ে যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত রুশনারা আলীর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
রুশনারা আলী ২০১০ সাল থেকে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি লেবার পার্টির প্রগতিশীল ও বহুজাতিক পরিচয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী উল্লেখ করেন, সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাজের পথে তার অবস্থান যেন বিভ্রান্তির কারণ না হয়, সে জন্য তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। অথচ সম্প্রতি তিনি বেসরকারি বাড়িওয়ালাদের ভাড়াটে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণকে ক্ষমতাবান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ভাড়াটেদের একজন লরা জ্যাকসন স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, এটি চরম শোষণ এবং এত ভাড়া আদায়ের চেষ্টা রীতিমতো হাস্যকর। তবে রুশনারা দাবি করেছেন, ভাড়াটেরা চুক্তির পূর্ণ মেয়াদ বসবাস করেছেন এবং চাইলে থাকতে পারতেন, কিন্তু তারা নিজেরাই চলে যান।
ভাড়াটে অধিকার সংগঠন অ্যাকর্ন ও রেন্টার্স রিফর্ম কোয়ালিশন তার পদত্যাগ দাবি করে। অ্যাকর্নের কর্মকর্তা অ্যানি কুলাম বলেন, তার কর্মকাণ্ড রেন্টার্স রাইটস বিলের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ বিরোধী। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রুশনারা নিজেই ওই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো মালিক ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করার পর ছয় মাসের মধ্যে সেই বাড়ি বেশি দামে ভাড়া দিতে পারবেন না।
বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হাউজিং সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি এ ঘটনাকে চরম ভণ্ডামির উদাহরণ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমন একজনকে গৃহহীনবিষয়ক দায়িত্বে রাখা যায় না। গ্রিন পার্টিও সমালোচনা করে জানায়, এ ঘটনা প্রমাণ করেছে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও দোষ ছাড়া উচ্ছেদ নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর আইন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সিলেটে জন্ম নেওয়া রুশনারা আলী মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।