Home জাতীয় হুন্ডি প্রতিরোধে সফল সরকার, বৈধ রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন

হুন্ডি প্রতিরোধে সফল সরকার, বৈধ রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: নতুন অর্থবছরের শুরুতেই রেমিট্যান্স প্রবাহে যে সুখবর এসেছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে বড় রকমের স্বস্তির বার্তা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স শুধু পরিসংখ্যানগত অগ্রগতি নয়, বরং এটি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেশের অর্থনীতির এক গভীর সংযোগের প্রমাণও বটে।
স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও সরকারি উদ্যোগের সুফল

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স আসার পেছনে প্রধান কারণ হলো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারি নানা বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, তখন রেমিট্যান্সে দেখা গিয়েছিল বড় ধরনের ভাটা। সে সময় প্রবাসীরা অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হন। তবে আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়, এবং সরকার হুন্ডি প্রতিরোধে সক্রিয় হয়।

বর্তমানে সরকার প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, যা বড় একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি, ব্যাংকিং সেবা সহজতর করা, ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুযোগ, নির্ভরযোগ্য এক্সচেঞ্জ রেট ইত্যাদি প্রবাসীদেরকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করে তুলছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসা এই রেমিট্যান্স সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করছে। এর ফলে ডলারের সংকট অনেকটাই কমে এসেছে, আমদানি ব্যয় নির্বাহ সহজতর হয়েছে, এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ায় ঋণ পরিশোধ, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন এবং অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সুবিধা তৈরি হয়েছে।

গত অর্থবছরের রেকর্ড প্রবাহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগের অর্থবছরে এই অংক ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৬ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে, যা প্রায় ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা বজায় থাকলে সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য প্রবাসীদের নিরাপত্তা, ন্যায়সঙ্গত শ্রম অধিকার ও দক্ষতা উন্নয়নের ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

সমাপ্তি

সামগ্রিকভাবে, নতুন অর্থবছরের সূচনাতেই রেমিট্যান্স খাতে এমন ইতিবাচক প্রবণতা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাদায়ী। বিদেশে থাকা প্রায় এক কোটির বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক এবং পেশাজীবীর প্রেরিত অর্থ শুধু তাদের পরিবারের জন্যই নয়, দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্যও এক নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই রেমিট্যান্সে রেকর্ড সুখবর। জুলাইয়ে এসেছে ২৪৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিতে ফিরছে স্থিতিশীলতা।