বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগীদের পুনর্বাসনে যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তির নতুন মাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে পাইলট প্রকল্প। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
চীনের কারিগরি সহায়তায় গড়ে তোলা এ সেন্টারে স্থাপন করা হয়েছে মোট ৬২টি উন্নতমানের রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক। এসব রোবট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদানে সক্ষম। রোবটগুলো রোগীর চলাফেরা, পেশীর শক্তি, স্নায়ুর প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা দেয়, যা সাধারণ ফিজিওথেরাপির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
এই রোবটিক সেন্টার বিশেষভাবে উপকারে আসবে যেসব রোগীরা স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুবিক বৈকল্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, নার্ভ ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দুর্বলতায় ভুগছেন এবং পুনর্বাসনের জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে চলতি বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে যারা এখনও শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এই সেন্টারে বিনামূল্যে রোবটিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
চীনের সরকার এই প্রকল্পে প্রায় ২০ কোটি টাকার রোবোটিক যন্ত্র অনুদান দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটিই প্রথম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ রোবটিক রিহ্যাব সেন্টার, যা আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা হয়েছে। বিএমইউ সূত্র জানায়, সেন্টারটি পুরোপুরি চালুর আগে চীনের ৭ সদস্যের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দলের তত্ত্বাবধানে দেশের ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা এখন রোবোটিক সিস্টেম পরিচালনায় সক্ষম।
বিশ্বজুড়ে রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা ইতিমধ্যেই বৈপ্লবিক সাফল্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রোবট-চালিত থেরাপির মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চলাফেরার সক্ষমতা ফিরে পাওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বাংলাদেশে এমন প্রযুক্তির সংযোজন কেবল একটি স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন নয়, বরং মানবিক কল্যাণে রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতারও প্রতিফলন।
সেন্টারটি পর্যায়ক্রমে সাধারণ রোগীদের জন্যও উন্মুক্ত করা হবে এবং নির্ধারিত নীতিমালার আওতায় চিকিৎসা ব্যয় সীমিত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রযুক্তি-নির্ভর পুনর্বাসন চিকিৎসা দেশে শুধু নতুন দিগন্তই উন্মোচন করবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় হতাশ রোগীদের জীবনে ফিরিয়ে আনবে নতুন আশার আলো।