আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক জলসীমায় অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নারী ও শিশুসহ এই রোহিঙ্গাদের কাউকে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই রাজধানী দিল্লি থেকে তুলে নিয়ে আন্দামান সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি শুধু অমানবিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, যাদের ফেলা হয়েছে, তারা সবাই সংস্থাটির নিবন্ধিত শরণার্থী ছিলেন। এই ঘটনায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদনও করা হয়েছে।
৬ মে রাতে দিল্লির উত্তম নগর, বিকাশপুরি ও হাসতসাল এলাকা থেকে একযোগে আটক করা হয় নারী, কিশোর, বৃদ্ধসহ এসব রোহিঙ্গাকে। ভুক্তভোগীদের স্বজনদের দাবি, পুলিশ প্রথমে বলেছিল শুধু বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর তাদের আর ঘরে ফেরা হয়নি।
এক রোহিঙ্গা নারী আমিনা বলেন, “আমার ভাই গ্রাম পুড়ে যাওয়ার পর ভারতে এসেছিল। পুলিশ বলেছিল কেবল তথ্য নেবে, সে বিশ্বাস করে চলে যায়। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই।”
আটকের পর তাদের প্রথমে ইন্দরলোক ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। পরে ৮ মে বিমানযোগে পাঠানো হয় আন্দামানে। সেখানে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে তাদের আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে একে একে জলে ফেলে দেওয়া হয়। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রাপথে রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তারা ইন্দোনেশিয়া যাবেন না মিয়ানমার? তারা বলেছিল মিয়ানমারে গেলে নির্যাতনের শিকার হবেন। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে বলা হয়, “কারও না কারও জাহাজ এসে তুলে নেবে।”
কিন্তু কেউ তুলে নেয়নি। অবশেষে প্রায় ১২ ঘণ্টা সাঁতরে তারা মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলে পৌঁছান বলে জানা গেছে।
সিনিয়র আইনজীবী কলিন গনসালভেস বলেন, “এই মানুষদের মিয়ানমার কখনো নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারত কীভাবে তাদের ফেরত পাঠায়? তাদের কোনো অপরাধ নেই, তারা কেবল মুসলমান বলেই কি এমন আচরণের শিকার?”
ইউএনএইচসিআরের এক আইন কর্মকর্তা জানান, আটককৃতদের আদালতে উপস্থাপন না করেই তাদের প্রত্যাবাসন আন্তর্জাতিক আইন ও ভারতের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। নারী ও শিশুর ক্ষেত্রেও যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি।
আরেক রোহিঙ্গা তরুণ রিফান বলেন, “আমার চাচাতো ভাই রাজনীতি থেকে দূরে থাকত, সে ভালো মানুষ ছিল। তাকে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলা হয়েছে।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় সরকারিভাবে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে এই ঘটনায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।