Home First Lead রাখাইনে যুদ্ধ তীব্র, বাংলাদেশে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

রাখাইনে যুদ্ধ তীব্র, বাংলাদেশে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

সংগৃহীত ছবি।

জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডর’ প্রস্তাবে উদ্বেগ, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষের প্রভাবে বাংলাদেশে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে। প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৬,৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বলে তথ্য মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতিমধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া, আরও ৫ থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা এখনো বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, “এই করিডর চালু হলে এটি কেবল মানবিক ইস্যু থাকবে না, বরং তা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে।”

তার মতে, সীমান্তে শৃঙ্খলা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং কৌশলগত ভারসাম্য সবকিছুই চাপে পড়তে পারে। তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ২০২৪ সালের মে, জুন ও জুলাই—এই তিন মাসে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের হার ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই সময় মিয়ানমারের মংডু এলাকায় জান্তা বাহিনীর হামলা বেড়ে যায় এবং সীমান্তে নজরদারি দুর্বল হয়ে পড়ে।

নতুন করে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার বসবাসের জায়গা করে দিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে।

এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।

প্রতিদিন কত জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আছে। তবে এ সংখ্যাটি কখনই শতাধিক নয়। জাতিসংঘের চিঠিতে উল্লেখ করা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে আরো ২ হাজার রোহিঙ্গা এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত বড় পরিসরে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরও কঠিন করে তুলবে। কারণ এটি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উত্সাহিত করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৫১ হাজার। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক। প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ও আশ্রয়ের প্রশ্নে বাংলাদেশ ফের আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক চক্রান্তের মুখোমুখি হতে পারে। তাই এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শক্ত অবস্থান গ্রহণ ও সুস্পষ্ট নীতিমালা জরুরি হয়ে পড়েছে।