Home সম্পাদকীয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আবারও বাড়ছে: জাতীয় নিরাপত্তা কি নতুন চ্যালেঞ্জে পড়ছে?

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আবারও বাড়ছে: জাতীয় নিরাপত্তা কি নতুন চ্যালেঞ্জে পড়ছে?

সংগৃহীত ছবি।

সম্পাদকীয়:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষ আরেকবার আমাদের ঘাড়ে ফেলেছে এক পুরনো ও গভীর সংকট—রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিমাসে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তা হয়ে উঠছে এক ধারাবাহিক মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকটের প্রতিচ্ছবি।

জাতিসংঘ যখন মানবিক করিডরের নামে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব করছে, তখন আমাদের স্মরণে রাখতে হবে—এটি আর নিছক মানবিক ইস্যু নয়। এই বাস্তবতায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে: মানবিকতা রক্ষার নামে কি আমরা কৌশলগত বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছি?

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারা এখন দেশের একটি আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার অংশ হয়ে গেছে—যেখানে নিরাপত্তা, অর্থনীতি, জনসংখ্যা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা সবই পড়েছে চাপে। এই প্রেক্ষাপটে আরও অনুপ্রবেশ ও জাতিসংঘের প্রস্তাবিত করিডর চালুর মতো উদ্যোগ আমাদের জন্য শুধু বোঝা নয়, এক রকম অনৈতিক চাপও।

শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ইস্যুকে মূল্যায়ন করা উচিত। সীমান্তে শৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ, কৌশলগত নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্য—সবই নতুন করে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা হবে দ্বিমুখী একদিকে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া, অন্যদিকে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করে অনুপ্রবেশ ঠেকানো। একইসঙ্গে জাতিসংঘকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে—রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত, বাংলাদেশে তাদের আশ্রয়ের মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের নয়।

রোহিঙ্গা ইস্যু শুধু মানবিক নয়, এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের একটি সূক্ষ্ম ক্ষেত্র। বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয় এককভাবে এই দায় দীর্ঘদিন বহন করা। আন্তর্জাতিক মহলকে তাই দাতব্য নয়, দায়িত্বের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।