নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৬টার দিকে বিজিবির টহল দল তাদের আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের পরিচয় অনুযায়ী তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। বিজিবি সূত্র জানায়, আটকরা কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্প থেকে প্রায় আট বছর আগে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন হায়দ্রাবাদের কাঞ্চনবাগ এলাকায় বসবাসের পর তারা সম্প্রতি বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করেন। তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনো কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতেই রয়েছেন।
অবৈধ পথ ধরে ফেরত আসা, নতুন প্রবণতা: বিজিবির একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা বাড়ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে ফেরার প্রবণতা চোখে পড়ছে। দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করে কাজ হারানো, পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি, এবং স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েই অনেকে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে গমন করা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই শ্রমবাজারে কম পারিশ্রমিকের কাজে যুক্ত ছিলেন। ভারতের অভ্যন্তরে একসময় তাদের ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকটের বিস্তৃত প্রতিফলন: রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি এতদিন পর্যন্ত একমুখীঅর্থাৎ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগমন—ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের অন্য দেশে গমন এবং পরে আবার ফিরে আসার ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি রোহিঙ্গা ইস্যুর নতুন মাত্রা। তারা শুধু আশ্রিত জনগোষ্ঠী নয়, এখন বহু দেশে ছড়িয়ে পড়া এক অস্থির জনসমষ্টি। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও মানবিক ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
আইনগত ও মানবিক দৃষ্টিকোণ: ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আল হেলাল মাহমুদ জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের রোহিঙ্গা পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় মানবিক বিবেচনাও জরুরি। কারণ, যারা আটক হয়েছেন, তারা বাস্তুচ্যুত, রাষ্ট্রহীন এবং জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো মানুষ।
সমাধানের পথ কোথায়: বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় রোহিঙ্গা সংকট এখন এক দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবতা। এ অবস্থায় সীমান্ত নিরাপত্তা, তথ্য আদানপ্রদান, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ন্যূনতম নীতিগত কাঠামো গড়ে তোলাই এখন জরুরি।
অন্যদিকে, ক্যাম্পে কাজের সুযোগ সীমিত থাকায় রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন, যদি না তাদের জন্য টেকসই কর্মসংস্থান ও প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা তৈরি করা যায়।
ভূরুঙ্গামারীতে আটক ১১ রোহিঙ্গার ঘটনা কেবল একটি সীমান্তঘটনা নয়; এটি আঞ্চলিক অস্থিরতা, মানবিক সঙ্কট এবং ব্যর্থ আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। সময় এসেছে এই ইস্যুকে কেবল নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, মানবিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতার আলোতেও নতুনভাবে ভাবার।










