Home অন্যান্য ভারতের ‘কেবিসি লটারি’ স্ক্যাম: মোবাইলে স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ

ভারতের ‘কেবিসি লটারি’ স্ক্যাম: মোবাইলে স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ

ধারাবাহিক প্রতিবেদন: লটারি ও প্রেমের ফাঁদ

পর্ব ২: 

ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কুইজভিত্তিক রিয়েলিটি অনুষ্ঠান ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ (কেবিসি) শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এখন প্রতারকদের বড় এক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ‘অমিতাভ বচ্চনের নাম করে কোটি টাকার লটারি জিতেছেন’—এমন প্রলোভনে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চয় হারাচ্ছেন প্রতিদিন।

একটি বাস্তব কাহিনী

২০২২ সালের জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের নাগপুর জেলার এক দরিদ্র কৃষকের মোবাইলে আসে একটি বার্তা—
“আপনি কেবিসি লটারি ২৫ লাখ রুপি জিতেছেন। সংগ্রহের জন্য এই নম্বরে যোগাযোগ করুন।”

চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কৃষকটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেই নম্বরে ফোন করেন। ফোনের ওপারে থাকা লোকজন দাবি করে, লটারি সংগ্রহে তাকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে চাওয়া হয় ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’, এরপর ‘ট্যাক্স’, তারপর ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট —এভাবে একে একে ১ লাখ ৬০ হাজার রুপি দিতে বাধ্য হন তিনি।

শেষমেশ লটারি তো দূরের কথা, ফোন নম্বরটিও বন্ধ হয়ে যায়। স্তব্ধ হয়ে যান সেই কৃষক। এই ঘটনার পর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। তদন্তে উঠে আসে, প্রতারকরা দিল্লি ও বিহার থেকে এসব মেসেজ পাঠায় এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করে।

প্রতারণার কৌশল

১. মোবাইলে আসে মেসেজ বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা—“আপনি কেবিসির বিজয়ী”

২. একটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়
৩. ‘প্রসেসিং ফি’, ‘ট্যাক্স’ ইত্যাদি নানা অজুহাতে টাকা দাবি করা হয়
৪. ধাপে ধাপে টাকা পাঠাতে বলা হয়
৫. টাকা পেয়ে প্রতারক নম্বর বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়

বাংলাদেশেও মিলছে একই ছকের প্রতারণা

এদেশেও বহু মানুষ কেবিসি, বিকাশ লটারি বা মোবাইল কোম্পানির পুরস্কারের প্রলোভনে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
চট্টগ্রামে এক গার্মেন্টস কর্মী ‘৫০ লাখ টাকার পুরস্কার’ পাওয়ার আশায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে এক স্কুল শিক্ষক মোবাইলে ‘বিকাশ কুইজ প্রতিযোগিতা জিতেছেন’—এমন মেসেজে বিশ্বাস করে প্রায় ৯০ হাজার টাকা খুইয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
  • আন্তর্জাতিক বা বড় কোম্পানির কোনো লটারি/পুরস্কার জেতার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা নেয় না
  • কারও কাছ থেকে এমন মেসেজ পেলে প্রতিষ্ঠানিকভাবে যাচাই করুন
  • ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’, ‘ট্যাক্স’ বা ‘কাস্টমস চার্জ’—এসবের নামে অর্থ চাওয়ার ঘটনা প্রতারণার সুনির্দিষ্ট লক্ষণ
  • অপরিচিত নম্বর থেকে আসা বার্তা বা লিংকে ক্লিক না করা এবং তথ্য না দেওয়া জরুরি

👉 পরবর্তী পর্বে:

পর্ব ৩: যুক্তরাষ্ট্রে ‘রোমান্স স্ক্যাম’ – প্রেমের সম্পর্কের মোহে নিঃস্ব হয়ে পড়া হাজারো মানুষ
একটি মেসেজ, এক মায়াবী প্রোফাইল, আর তাতে হারানো লাখ লাখ টাকা—অনলাইনে গড়ে ওঠা প্রেম কীভাবে পরিণত হয় সর্বনাশে, জানবেন আমাদের পরবর্তী পর্বে।


আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন

আপনিও কি কখনো এমন ফোন কল, মেসেজ বা হোয়াটসঅ্যাপে লটারি জেতার প্রলোভন পেয়েছেন?
কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা লিখুন—এতে অন্যরাও সচেতন হবে, প্রতারকের ফাঁদে পা দেবেন না।