ধারাবাহিক প্রতিবেদন: লটারি ও প্রেমের ফাঁদ
পর্ব ৬:
বাংলাদেশে প্রতারকদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হাতিয়ার এখন মোবাইল আর বিকাশ। পরিচিত নম্বর, আত্মীয় বা বন্ধুর নামে ফোন করে ভয় দেখানো কিংবা লোভ দেখানো—এর সবকিছুই এখন এক ভয়ংকর ডিজিটাল ফাঁদ। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েই দেশের হাজারো মানুষ হারিয়েছে অর্থ, সম্মান আর নিরাপত্তা।
একটি বাস্তব কাহিনী
২০২৪ সালের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র রায়হান হঠাৎ একটি ফোন পান। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, “আপনার নামে একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে টাকা লেনদেন হচ্ছে। এখনই থানা থেকে মামলা হবে, যদি ১০ হাজার টাকা জরিমানা না দেন।”
ভয়ে অস্থির হয়ে রায়হান বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা পাঠান, পরদিন আবার ফোন আসে আরও টাকা চেয়ে। তখনই বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তিনি থানায় অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ জানায়, এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ, যারা দিনে শতাধিক এমন কল করে।
প্রতারণার কৌশল
- ভুয়া পরিচয়ে (পুলিশ, র্যাব, ব্যাংক অফিসার) ফোন করে ভয় দেখানো
- “আপনার নামে সিম নিবন্ধিত”, “আপনার বিকাশে ভুল করে টাকা এসেছে” অথবা “আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে”—এমন কথা বলে টাকা দাবি
- অনেকে পরিচিত নম্বর স্পুফ করে ফোন করে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে
- অজান্তেই তারা মোবাইল নম্বর হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করে
বাংলাদেশে প্রতিদিন কতজন প্রতারিত হচ্ছেন?
বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ইউনিটের মতে, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ মানুষ বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং স্ক্যামের শিকার হন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারী ও বয়স্কদের টার্গেট করে এই চক্রগুলো বেশি সক্রিয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
- অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন পেলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে যাচাই করুন
- ‘আপনার নামে সিম’ বা ‘বিকাশে সমস্যা’ বলে কেউ টাকা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তা অস্বীকার করুন
- প্রয়োজনে ৯৯৯ এ ফোন দিন অথবা সরাসরি থানা বা বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে জানান
- ফোনে কেউ পরিচয় না দিয়ে টাকা চাইলে সেটি প্রতারণা ধরে নিন
পরবর্তী পর্বের ইঙ্গিত
👉 পর্ব ৭: আফ্রিকার নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম – ৫০ লাখ ডলারের লোভ, প্রতারণার ইতিহাস বদলানো কাহিনী
এবার আমরা যাচ্ছি সেই প্রতারণা কাহিনিতে, যেখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ই-মেইল স্ক্যাম শুরু হয়েছিল—‘নাইজেরিয়ান প্রিন্স’!