আজহার মুনিম, লন্ডন: শনিবার সন্ধ্যায় ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজশায়ারে চলন্ত ট্রেনে ভয়াবহ এক গণছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত ১০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটিকে “বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে বিবেচনা করে ইতিমধ্যে কাউন্টার টেররিজম পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ (বিটিপি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে ডনকাস্টার থেকে লন্ডন কিংস ক্রসগামী ট্রেনটি পিটারবরো স্টেশন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর দুই ব্যক্তি হঠাৎ যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। যাত্রীরা প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করতে করতে ট্রেনের ভেতর দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে পুরো বগি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরে হাতে বড় ছুরি নিয়ে যাত্রীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। অনেক যাত্রী বাথরুমে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অন্যরা আতঙ্কে ট্রেনের করিডরে পড়ে যাচ্ছিলেন। “রক্তে ভেসে যাচ্ছিল পুরো বগি, যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য,” বলেন এক যাত্রী।
হামলার পরপরই সশস্ত্র পুলিশ হান্টিংডন স্টেশনে ট্রেনটি থামিয়ে দ্রুত অভিযানে নামে। দুই হামলাকারীকে ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের সময় তাদের একজনকে টেজার গান দিয়ে কাবু করা হয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, “হান্টিংডনের কাছে ট্রেনে ভয়াবহ এই হামলার খবর গভীরভাবে উদ্বেগজনক। আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং জরুরি সেবাকর্মীদের সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”
হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনার খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন অনুমাননির্ভর মন্তব্য না করেন।”
ঘটনাস্থলে রাতভর ফরেনসিক দল কাজ করেছে। তারা ট্রেনের নিচে এবং রেললাইনের আশপাশ থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে। বিটিপি প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ক্রিস কেসি জানিয়েছেন, তদন্তের প্রাথমিক ধাপ এখনো চলছে এবং ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুমান করা “অনুপযুক্ত” হবে।
একজন যাত্রী স্কাই নিউজকে জানান, “আমি দেখলাম এক রক্তাক্ত ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলছে—‘তাদের হাতে ছুরি, আমাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’” আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ঘটনাস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “শুরুতে ভেবেছিলাম হয়তো হ্যালোইন উপলক্ষে কোনো প্র্যাঙ্ক চলছে, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সবাই দৌড়াতে শুরু করল, আর আমি দেখি হাতভরা রক্ত।”
রাত ১১টার দিকে আহতদের সরিয়ে নেওয়ার পর বাকি যাত্রীদের কোচে করে লন্ডনে পাঠানো হয়। হান্টিংডন স্টেশন ও এর আশপাশে রাতভর বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে।
পিটারবরো ও ক্যামব্রিজশায়ারের মেয়র পল ব্রিস্টো এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ভয়াবহ ঘটনার পর আমার চিন্তা ও প্রার্থনা সকল ভুক্তভোগীর সঙ্গে রয়েছে।”
বিটিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহত কেউ নেই, তবে নয়জনের অবস্থা সংকটজনক। হামলার পর ওই অঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লন্ডন নর্থ ইস্টার্ন রেলওয়ে (এলএনইআর) জানিয়েছে, হান্টিংডন স্টেশন আপাতত বন্ধ থাকবে এবং অন্তত সোমবার পর্যন্ত সার্ভিস ব্যাহত থাকবে। সংস্থাটি যাত্রীদের “যাত্রা স্থগিত রাখার” আহ্বান জানিয়েছে।
এ ঘটনায় পুরো যুক্তরাজ্যজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ট্রেন ও গণপরিবহনে বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে।









