Home অন্যান্য ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয়: প্রবাসী বাংলাদেশিদের টিকে থাকার লড়াই

ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয়: প্রবাসী বাংলাদেশিদের টিকে থাকার লড়াই

আজহার মুনিম, লন্ডন: ২০২৫ সালে এসে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিনের খরচ চালিয়ে যাওয়া। হাউস রেন্ট, খাবার, যাতায়াত, গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল সবকিছুরই ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। লন্ডন কিংবা বার্মিংহামের মতো বড় শহর তো বটেই, অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী শহরগুলোতেও জীবনধারণ হয়ে উঠেছে কষ্টসাধ্য।

বিশেষ করে যাঁরা ছাত্র ভিসায় এসেছেন, কিংবা নতুন অভিবাসী হয়ে এসেছেন, তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, “আগে যেখানে এক রুম শেয়ার করে থাকা যেত ৩০০ পাউন্ডে, এখন সেই রুমই ৫৫০ পাউন্ড নিচ্ছে। খাওয়ার খরচও বেড়েছে।”

এক সময়ের ‘বাংলা টাউন’ খ্যাত লন্ডনের ইস্ট এন্ডে এখন আর সস্তায় কিছুই মেলে না। দোকানদাররা বলছেন, মালামালের পাইকারি দাম এত বেড়েছে যে আগের মতো পণ্যের দাম কম রাখা যাচ্ছে না। ফলে মাছ-মাংস তো বটেই, চাল-ডালও এখন অনেকের আয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। ট্রাভেলকার্ডের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেসরকারি যানবাহনের চার্জে লাগাম নেই। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাঁটছেন কিংবা সাইকেল ব্যবহার করছেন, যা শীতকালে ভয়ংকর কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।

সবচেয়ে ভোগান্তির জায়গা হলো বাড়িভাড়া। মালিকরা বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন, আর অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি নবায়নের সময় নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। এতে ভাড়া নিয়ে রুমমেটদের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।

একজন অভিজ্ঞ প্রবাসী বলেন, “আগে দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করলেই খরচ চালিয়ে কিছু জমানো যেত। এখন ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও মাস শেষে হাতে কিছু থাকে না।”

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো যে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ছাত্রদের ‘পার্টটাইম’ কাজের সুযোগও কমে গেছে। অনেকে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত কাজ করে ঝুঁকি নিচ্ছেন। আবার যাঁরা পরিবার নিয়ে এসেছেন, তাঁদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার খরচ, স্কুলের সরঞ্জাম, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যয়—সব মিলিয়ে মাস শেষ হয় ঋণে ডুবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতি, ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাজার অস্থিরতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সামনে এখন টিকে থাকার যুদ্ধ চলছে। কেউ বাড়তি শিফট করছেন, কেউ আবার পরিবার দেশে ফেরত পাঠিয়ে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

সমাপ্তি নয়, প্রতিরোধের শুরু: এই সংকটে প্রবাসীদের উচিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানো। কমিউনিটি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে এসে নতুন অভিবাসীদের সহায়তায় বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নিতে হবে।

আপনি কি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন? জীবনযাত্রার ব্যয় কতটা প্রভাব ফেলছে আপনার ওপর? নিচে মন্তব্য করুন, লাইক ও শেয়ার করে আপনার মত জানাতে ভুলবেন না।

লেখাটি বিজনেসটুডে২৪–এর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাস্তবতা তুলে ধরার ধারাবাহিক ‘লন্ডনের চিঠি’ সিরিজের অংশ।
পরবর্তী চিঠির অপেক্ষায় থাকুন।