Home সারাদেশ কুড়িগ্রামে আসাম থেকে ভেসে এল ‘লালচে’ কাঠ, বিক্রির ধুম

কুড়িগ্রামে আসাম থেকে ভেসে এল ‘লালচে’ কাঠ, বিক্রির ধুম

ছবি : এ আই
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণের কারণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কয়েক দিন ধরে ক্রমবর্ধমান ছিল। এর ফলে জেলার ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদীতে ভারত থেকে ভেসে এসেছে বিপুল পরিমাণ গাছের গুঁড়ি। স্থানীয়রা প্রথমে এগুলোকে ‘রক্ত চন্দন’ বা ‘লাল চন্দন কাঠ’ ভেবে বিক্রি শুরু করেন।

রোববার ভোর থেকেই কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদী এবং চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে আসাম থেকে ভেসে আসা এসব কাঠ চোখে পড়ে। উৎসুক জনতা নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নেমে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলা বানিয়ে নদীর স্রোত থেকে কাঠগুলো ধরে তীরে তুলতে শুরু করেন। এর পরই অনেকে তা বিক্রি শুরু করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব গাছের গুঁড়ির দাম ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি।

নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামাল গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৬০) জানান, “চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো একটি লালচে গাছ তুলেছি। এটি দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। আমরা দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করব।”

অন্যদিকে অনেক মানুষ এই কাঠ জ্বালানি হিসেবে কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, “আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটি গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে বিক্রি করব জ্বালানি কাঠ হিসেবে।” ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া (৬২) জানান, “রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছুটা রান্নার জন্য রাখব, বাকিটা বিক্রি করব।”

জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই পচা কাঠ। ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামের দিকে ভেসে এসেছে। মানুষ এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।”

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন জানান, “প্রায় সব কাঠে ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো দ্রবীভূত হয়ে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। ফলে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রঙ ধারণ করে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই। চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো ধরনের গন্ধ বা তেলীয় উপাদান নেই।”

স্থানীয়রা বলছেন, নদী থেকে ভেসে আসা এই ‘লালচে’ কাঠের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে না। অনেকেই তা বিক্রি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, এই কাঠ প্রকৃত চন্দন নয় এবং দীর্ঘ সময় পানিতে ভেসে থাকার কারণে পচা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।