Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য কুষ্টিয়ায় লালনের জন্মস্থান: ইতিহাস না জনশ্রুতি

কুষ্টিয়ায় লালনের জন্মস্থান: ইতিহাস না জনশ্রুতি

ছবি: এআই

বাংলার আধ্যাত্মিক ও লোকজ ঐতিহ্যে ফকির লালন শাহ শুধু একজন সাধক নন, বরং একটি দর্শনের নাম। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় তার আখড়াবাড়ি ঘিরে এখনো জেগে আছে এক অন্তর্জগতের স্পন্দন। বিজনেসটুডে২৪.কম–এর জন্য ধারাবাহিকভাবে রচিত এই দশ পর্বের ফিচার সিরিজে আমরা খুঁজে দেখব লালনের জীবন, দর্শন, অনুসারীদের জীবনযাপন এবং আধুনিক সময়ে তার প্রভাব। পুরো সিরিজটি তৈরি করেছেন দৈনিক বার্তার সাবেক কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মোজাফফর রাহমান (বাদল), যিনি সরেজমিন থেকে দীর্ঘদিন ধরে লালনের আখড়া ও আশপাশের পল্লিগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন।

আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব।


লালনের দেশে: পর্ব ১

মোজাফফর রাহমান বাদল, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া আজ শুধুমাত্র একটি ভূগোল নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে এক আধ্যাত্মিক অনুরণনের স্থান। এখানে লালন শাহের পদচিহ্ন আছে বলে বিশ্বাস করে হাজারো অনুসারী। তবে ঠিক কোথায় লালনের জন্ম, সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে গবেষকদের মাঝে রয়েছে নানা মতপার্থক্য ও বিতর্ক।

একটি মত অনুসারে, লালনের জন্ম হয়েছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার হারিনারায়ণপুর গ্রামে। আবার অনেকে দাবি করেন, তিনি ছিলেন যশোর জেলার ছাগলাদহ এলাকার সন্তান। যদিও ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িকে কেন্দ্র করেই তার সাধনা জীবন গড়ে উঠেছে, কিন্তু জন্মস্থান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আজও অনুপস্থিত।

জনশ্রুতি বলছে, লালন একসময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পরে এক মুসলমান পরিবার তাকে উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলে। এই ঘটনা থেকে অনুমান করা হয়, তিনি হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন, কিন্তু সেই পরিচয়কে নিজেই অস্বীকার করে জীবনের একটি ভিন্নতর পথ বেছে নেন।

তবে বাস্তবতা হলো, লালন নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে তার পরিচয় আড়াল রেখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মানুষ যেন তাকে ধর্ম, জাত কিংবা বর্ণ দিয়ে না বিচার করে, বরং চিনে তার চিন্তা, গানের ভাষা ও আধ্যাত্মিক অনুভব দিয়ে। তার সেই বিখ্যাত গান—সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে—আজও সমাজের গায়ে প্রশ্নবাণ ছুড়ে দেয়।

ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি আজও বহন করে লালনের অস্তিত্ব। এখানে তার সমাধি, গানচর্চা, অনুসারীদের বাসস্থান, মেলা সব কিছু মিলে গড়ে উঠেছে একটি নীরব আধ্যাত্মিক পরিবেশ। কেউ কেউ মনে করেন, জন্মস্থান যেখানেই হোক, তার মূল আবাস এই আখড়াতেই, আর এখানেই তিনি চিরকাল বর্তমান।

যতদিন পর্যন্ত তার জন্মসনদ বা নির্দিষ্ট পরিচয় পাওয়া যাবে না, ততদিন পর্যন্ত লালন হয়তো থাকবেন ইতিহাস আর কল্পনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে। সেই কিংবদন্তির শুরু আজকের এই পর্বে, আর পথ চলা চলবে আরও নয়টি অধ্যায়ে।

লালনের জন্ম নিয়ে বিতর্ক হয়তো রয়ে গেছে, কিন্তু তার সাধনভূমি ছেঁউড়িয়া আজও জেগে আছে নিঃশব্দে। সেই আখড়াবাড়ির অন্তর্জগৎ জানতে পরবর্তী পর্ব পড়ুন—লালনের আখড়া: যেখানে মিলন ঘটে মানবতার সঙ্গে, শুধুমাত্র বিজনেসটুডে২৪.কম–এ।