Home বিনোদন লালন একাডেমি: কী শেখায়, কে শেখে?

লালন একাডেমি: কী শেখায়, কে শেখে?

লালনের দেশে : পর্ব ৭

মোজাফফর রাহমান বাদল, কুষ্টিয়া: ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির পাশেই অবস্থিত লালন একাডেমি। এটি কেবল একটি ভবন নয়, বরং একটি দর্শনের পাঠশালা। একাডেমির প্রাঙ্গণে পা রাখলেই যেন শোনা যায় এক নীরব ডাক, জানতে হবে, বুঝতে হবে, আর ধারণ করতে হবে সেই ভাব, যে ভাব লালনের বাউলতত্ত্বে প্রতিধ্বনিত হয়।

১৯৭৪ সালে গঠিত এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল লালন শাহের জীবন, দর্শন, গান ও বাউল সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা, সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ। একাডেমি পরিচালনায় রয়েছে একটি পরিচালনা পরিষদ, যার মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, বাউল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কিছু সদস্য যুক্ত।

প্রথমদিকে একাডেমি ছিল গবেষণাকেন্দ্রিক। এখানে লালনের গানের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ, গান লিপিবদ্ধকরণ এবং বাউলদর্শন নিয়ে আলোচনার আয়োজন হতো। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গবেষক, শিক্ষার্থী এবং সংগীতপ্রেমীরা এখানে এসে পাঠ, পর্যবেক্ষণ ও আলাপচারিতায় যুক্ত হতেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার ধারাবাহিকতা কিছুটা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে একাডেমির সবচেয়ে কার্যকর অংশ হলো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। প্রতি বছর লালনের মৃত্যুবার্ষিকীতে যে স্মরণোৎসব হয়, তার প্রধান আয়োজন করে এই একাডেমি। তাছাড়া বিভিন্ন সময় বাউল সংগীত প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, তরুণ বাউলদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং লালনের গান বিষয়ক পাঠচক্র পরিচালিত হয়।

একাডেমিতে একটি ছোট গ্রন্থাগার আছে, যেখানে কিছু গবেষণা গ্রন্থ, লালনের গানসংকলন এবং সাহিত্যিক পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোর অনেকটাই পাঠের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। কিছু দর্শনার্থী জানান, এ গ্রন্থাগার যদি ডিজিটাল করা হতো, তাহলে দেশ-বিদেশের অনেক গবেষক উপকৃত হতেন।

একাডেমির একটি সেমিনার কক্ষ রয়েছে, যেখানে মাঝে মাঝে আলোচনার আয়োজন হয়। তবে কুষ্টিয়ার বাইরে এই একাডেমির কাজ ও গবেষণা ফলাফল খুব বেশি প্রচারিত হয় না। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না এখানে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে লালনের গান কেবল গাওয়া নয়, বিশ্লেষণও করা হয়।

বাউলরা বলেন, একাডেমি যদি সত্যিকার অর্থে লালনের দর্শন শেখাতে চায়, তবে কেবল অনুষ্ঠান আয়োজন নয়, দর্শনের চর্চাকেই মুখ্য করতে হবে। নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে আলোচনা, গবেষণালব্ধ প্রকাশনা ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক অধ্যয়নের কেন্দ্রবিন্দু।

লালনের গান কেবল শ্রবণের জন্য নয়, তা বুঝতে হয় অন্তর দিয়ে। আর সেই বোঝাপড়ার পথ তৈরির দায়িত্ব নিতে পারে লালন একাডেমি, যদি সে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলে একটি আধুনিক ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক পাঠশালা হিসেবে।

লালনের দর্শন শেখানোর প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে জেগে ওঠে, তাহলে সেই আলো ছড়াবে বহুদূর। পরবর্তী পর্বে জানুন—বাউলজীবনের জঠরযাত্রা: সহজ মানুষের সহজ সংসার, শুধুমাত্র বিজনেসটুডে২৪.কম–এ।