Home Third Lead দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার কিশোর, কারাগারে নির্দোষ রেস্টুরেন্ট মালিক?

দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার কিশোর, কারাগারে নির্দোষ রেস্টুরেন্ট মালিক?

মায়ের সাথে রবিউল
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের ওসমানীনগরে দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত কিশোরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিখোঁজ, লাশ শনাক্ত, দাফন এবং হত্যা মামলা—সবকিছুর মধ্যেই ঘটনার নাটকীয় মোড় তদন্ত প্রক্রিয়ার গাফিলতি ও পারিবারিক চাপের দিকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

১৪ বছরের কিশোর রবিউল ইসলাম নাঈম গত ২৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল। স্থানীয়দের ধারণা, রেস্টুরেন্ট মালিক বুলবুল ফকিরের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই সে নিখোঁজ হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরই মধ্যে ৩ আগস্ট কুলাউড়া থেকে এক অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। পরিবার সেটিকে নাঈমের লাশ হিসেবে শনাক্ত করে এবং তাড়াহুড়া করে দাফন সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে তার পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বুলবুল ফকিরকে প্রধান আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

কিন্তু শনিবার (২৩ আগস্ট) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার এসআই মুস্তাফিজুর রহমান তদন্তের সূত্র ধরে নাঈমকে হবিগঞ্জের নবিগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করেন। উদ্ধার শেষে নাঈমকে আদালতে পাঠানো হয় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য।

এখন প্রশ্ন উঠছে, যে লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়েছিল, সেটি আসলে কার? কেনই বা পরিবার ভুল লাশ শনাক্ত করল? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, যথাযথ ডিএনএ টেস্ট বা ফরেনসিক যাচাই ছাড়াই কিভাবে পুলিশ ও পরিবার একটি লাশকে নাঈমের দাবি করে দাফনের অনুমতি দিল?

আইনজীবী মহলের অভিমত, এ ঘটনায় শুধু পরিবারের তাড়াহুড়া নয়, তদন্তকারীদের অদক্ষতাও স্পষ্ট হয়েছে। যার ফলে একজন নির্দোষ ব্যক্তি হয়তো জেলে দিন কাটাচ্ছেন। যদি প্রমাণিত হয় নাঈম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিল, তবে মামলা ও আসামি গ্রেপ্তার সবকিছুই নতুন মোড়ে যাবে।

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে অনেক সময় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে হত্যা হিসেবে আঁকড়ে ধরা হয়। এতে পরিবারের আবেগ, সমাজের চাপ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার ত্রুটি মিলিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নাঈমের ঘটনা সেই উদাহরণ হিসেবেই সামনে এসেছে।

বর্তমানে আদালতের জবানবন্দি ও পরবর্তী তদন্তের ওপর নির্ভর করছে বুলবুল ফকিরের ভাগ্য এবং মামলার ভবিষ্যৎ। পাশাপাশি যাকে কবর দেওয়া হয়েছে, তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন ঘটনায় শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো এলাকার মানুষ হতবাক। নাঈমকে জীবিত উদ্ধারের খবর আনন্দ দিলেও, তদন্ত প্রক্রিয়ার গাফিলতি ও ভুল শনাক্তকরণের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।