বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ইশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল একই পরিবারের দুই নারীসহ তিনজনের। হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের মুন্নার মোড় এলাকায়।
নিহতরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার গাজীরহাট এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সুর্বনা খাতুন (৪২), তাদের ১১ বছর বয়সী মেয়ে পূর্ণতা মফিজা, এবং স্থানীয় মুন্নার মোড় এলাকার মৃত আবেদ আলী মন্ডলের ছেলে আনিছুর রহমান (৩৫)। আহত অবস্থায় বেঁচে গেছেন মফিজুল ইসলাম, যিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে পাকশী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশফিকুর রহমান জানান, মফিজুল ইসলাম পরিবারসহ কুষ্টিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে নাটোরে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে মুন্নার মোড়ে রাস্তার পাশে লিচু কিনতে মোটরসাইকেলটি থামান। ঠিক তখনই দ্রুতগতির একটি কাভার্ড ভ্যান পেছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা দেয়।
দৃশ্যটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে ও লিচু বিক্রেতা আনিছুর রহমানের মৃত্যু হয়। রক্তে ভেসে যায় মুন্নার মোড়ের পিচঢালা পথ। চিৎকার আর আহাজারিতে মুহূর্তেই শোকের মাতম নেমে আসে ঘটনাস্থলে।
খবর পেয়ে ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত মফিজুল ইসলামকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানটি দ্রুত পালিয়ে যায়। ওসি মোশফিকুর রহমান বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ঘাতক গাড়িটি শনাক্তে কাজ চলছে। চালক ও যানবাহন আটক করতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুন্নার মোড় এলাকায় প্রভাবশালী পরিবহন চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থা ও নজরদারির অভাবে সড়ক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার আকাশ। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মফিজুল ইসলাম। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মফিজুল ইসলাম সদ্যই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মেয়েকে নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিল তার—সেই আশাও থেমে গেল লিচু কেনার মুহূর্তে।