হেলথ ডেস্ক: মৃত্যুভয়, গর্ভপাত ও ক্যান্সারের মেঘ পেরিয়ে অবশেষে জীবনের নতুন আলোয় আলোকিত হচ্ছেন পেলোটন প্রশিক্ষক লিয়ান হেইনসবি-অ্যালডিস। স্তন ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার এক বছর পর, তিনি এখন ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এবং জীবনের নতুন অধ্যায়ের জন্য আনন্দে ভাসছেন।
দক্ষিণ লন্ডনের বাড়িতে স্বামী ও সহকর্মী প্রশিক্ষক বেন অ্যালডিস এবং তাদের প্রিয় কুকুর জ্যাগসকে সঙ্গে নিয়ে লিয়ানের এখনকার দিনগুলো শান্তি ও আশার রঙে ভরা। ৩৮ বছর বয়সী এই নারী বলেন, “আমি জানি আমি এখন কতটা আশীর্বাদধন্য। প্রথম তিন মাস খুব ভয় লাগত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে পেয়েছি।”
দুর্ভাগ্যের পর দুর্ভাগ্য
২০২২ সালটি ছিল লিয়ানের জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছর। প্রথমে গর্ভপাত, তারপর প্রিয় বান্ধবী ড্যানিয়েলের মৃত্যু—এবং এরপরই স্তনে পাওয়া এক টিউমার বদলে দেয় তাঁর জীবন। পরীক্ষা করে জানা যায়, এটি ছিল “ট্রিপল-পজিটিভ” স্তন ক্যান্সার। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে প্রিয় বান্ধবীর শেষকৃত্য ও ক্যান্সার নির্ণয়ের ধাক্কায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
তবুও, তিনি হাল ছাড়েননি। চিকিৎসার পাশাপাশি নিজের মাতৃত্বের সম্ভাবনাকে রক্ষা করার জন্য কেমোথেরাপির আগে আইভিএফ (IVF) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভ্রূণ সংরক্ষণ করেন। চিকিৎসার সময়ও পেলোটনের লাইভ ক্লাস নিতে থাকেন তিনি—যা ছিল তাঁর কাছে এক ধরণের ‘মনোবল ধরে রাখার মাধ্যম’।
“মানুষ ভাবত আমি বীরত্ব দেখাচ্ছি, কিন্তু আসলে এটি ছিল আমার নিজের বাঁচার পথ,” বলেন লিয়ান। “সেই এক ঘণ্টা আমি ক্যান্সার রোগী ছিলাম না—আমি ছিলাম লিয়ান, আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে জীবনের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলাম।”
অবশেষে ‘ক্যান্সারমুক্ত’ ঘোষণা
দীর্ঘ কেমো, অস্ত্রোপচার ও রেডিওথেরাপির পর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চিকিৎসকরা তাঁকে ‘ক্যান্সার মুক্ত’ ঘোষণা করেন। তবে তাঁর কথায়, “ক্যান্সার শেষ হয়ে গেলেও তার ভয় কখনো পুরোপুরি শেষ হয় না।”
তিনি বলেন, চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরই মানসিক চাপ সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। “যখন চিকিৎসা চলছিল, সবাই আমার যত্ন নিচ্ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলে সেই সুরক্ষা আর থাকে না—তখনই ভয়টা সবচেয়ে তীব্র হয়ে ওঠে।”
এ সময় থেরাপি ও পারিবারিক সহায়তাই তাঁকে মানসিকভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
মাতৃত্বের আশার আলো
চিকিৎসার প্রায় দুই বছর পর, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবারও আইভিএফ শুরু করেন। সেই এপ্রিলেই প্রথমবারের মতো ভ্রূণ স্থাপন সফল হয়।
“প্রেগন্যান্সি টেস্টের দিন পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এটি সত্যি হতে পারে। কিন্তু নীল দাগ দেখা মাত্রই আমরা দুজনই কেঁদে ফেলেছিলাম,” স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
এই বছরের আগস্টে দম্পতি সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের সুখবরটি জানান। পোস্টে লেখা ছিল— “With a little help, and a lot of patience, it’s our time.”
ভালোবাসা ও জীবনের নতুন শুরু
লিয়ান ও বেন ২০২1 সালে এনগেজমেন্টের পর নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। “মৃত্যু, গর্ভপাত ও ক্যান্সার—এসব হয় মানুষকে ভেঙে দেয়, নয়তো আরও শক্ত করে তোলে। আমাদের ক্ষেত্রে এটি ভালোবাসাকে আরও গভীর করেছে,” বলেন লিয়ান।
ডিসেম্বরে সন্তানের জন্মের অপেক্ষায় আছেন এই দম্পতি। নতুন জীবনের প্রস্তুতি নিতে লিয়ান বেছে নিয়েছেন এমন এক হাসপাতাল, যেখানে ক্যান্সার চিকিৎসার স্মৃতি নেই। “আমি নতুন এক শুরু চাই,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য, সচেতনতা ও অনুপ্রেরণা
লিয়ানের জীবন কেবল ক্যান্সারজয় নয়—এটি এক নারীর মানসিক শক্তি, দৃঢ়তা ও নতুন জীবনের প্রতীক। তিনি বলেন, “আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, কিন্তু শিখেছি কিভাবে সহজভাবে, ভারসাম্য রেখে বাঁচতে হয়। এই নতুন অধ্যায়, আমি তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।”
স্তন ক্যান্সার ও গর্ভাবস্থা: যা জানা জরুরি
- চিকিৎসকরা সাধারণত পরামর্শ দেন, ক্যান্সার চিকিৎসা শেষ হওয়ার অন্তত ২ বছর পর গর্ভধারণের চেষ্টা করা নিরাপদ।
- গর্ভাবস্থায় কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি বা রেডিওথেরাপি নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
- যদি চিকিৎসার সময় গর্ভধারণ ঘটে, দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে—প্রয়োজনে চিকিৎসা সময়সূচি পরিবর্তন করা যায়।
উৎস: ম্যাকমিলান ক্যান্সার সাপোর্ট ও ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে