Home আন্তর্জাতিক বিশ্বের কনিষ্ঠতম বিলিয়নেয়ার: ২৯ বছরেই ইতিহাস গড়লেন লুয়ানা

বিশ্বের কনিষ্ঠতম বিলিয়নেয়ার: ২৯ বছরেই ইতিহাস গড়লেন লুয়ানা

লুয়ানা লোপেস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টেইলর সুইফট বা কাইলি জেনার নন, বিশ্বের কনিষ্ঠতম ‘সেলফ-মেড’ নারী বিলিয়নেয়ার বা শতকোটিপতির খেতাব এখন লুয়ানা লোপেস লারার দখলে। মাত্র ২৯ বছর বয়সী ব্রাজিলে জন্মগ্রহণকারী এই সাবেক ব্যালেরিনা নিজের মেধা ও পরিশ্রমে ১.৩ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) সম্পদের মালিক হয়েছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিন নিশ্চিত করেছে যে, লুয়ানা বর্তমানে নিজের উপার্জিত অর্থে বিলিয়নেয়ার হওয়া বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী।

সাফল্যের নেপথ্যে ‘কালশি’
লুয়ানার এই আকাশচুম্বী সাফল্যের মূলে রয়েছে তার সহ-প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ‘কালশি’ (Kalshi)। এটি একটি আইনি ও নিয়ন্ত্রিত ‘প্রেডিকশন মার্কেট’ বা ভবিষ্যদ্বাণী করার এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম। এখানে সাধারণ মানুষ নির্বাচন, খেলাধুলা বা সেলিব্রিটিদের বিভিন্ন ঘটনার ফলাফলের ওপর বাজি ধরতে বা ট্রেড করতে পারেন। বর্তমানে কালশির বাজারমূল্য ১১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং এই কোম্পানিতে লুয়ানার প্রায় ১২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

নাচ থেকে প্রযুক্তির জগতে
লুয়ানার বিলিয়নেয়ার হওয়ার গল্পটি সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। ব্রাজিলের বলশয় থিয়েটার স্কুলে তিনি কঠোর ব্যালে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে লুয়ানা জানান, সহনশীলতা পরীক্ষার জন্য শিক্ষকরা তাদের উরুর নিচে জ্বলন্ত সিগারেট ধরতেন। এরপর তিনি অস্ট্রিয়ায় পেশাদার ব্যালেরিনা হিসেবেও কাজ করেন।

তবে নাচের জগত ছেড়ে তিনি ঝুঁকে পড়েন পড়াশোনায়। ব্রাজিলের অ্যাস্ট্রোনমি ও গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর, মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে (MIT) কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে যান। সেখানেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

ঝুঁকি ও আইনি লড়াই
২০১৭ সালে এমআইটির সহপাঠী তারেক মনসুরের সঙ্গে মিলে ‘কালশি’ প্রতিষ্ঠা করেন লুয়ানা। কিন্তু পথটা সহজ ছিল না। লুয়ানা জানান, কলেজ শেষ করেই তারা বিশাল ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কোম্পানিটি সরকারি অনুমোদন না পেলে শূন্যের কোঠায় নেমে যেত। শুরুর দিকে ৪০টিরও বেশি ল ফার্ম তাদের ‘অল্পবয়সী’ অজুহাতে আইনি সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিএফটিসি (CFTC) তাদের নির্বাচনী বাজি ধরার বাজার বন্ধ করে দেয়। বিনিয়োগকারীরা পিছু হটতে বললেও লুয়ানা দমে যাননি। তিনি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই মামলায় জয়ী হন। এই রায়ের ফলে ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে তার প্ল্যাটফর্মে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি লেনদেন হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সঠিক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

বর্তমান অবস্থান
আদালতের রায়ের পর কালশির প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর হারে বেড়েছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটিতে প্রতি সপ্তাহে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ট্রেডিং হচ্ছে। রবিনহুড, ওয়েবুল এবং গুগল ফিন্যান্সের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কালশির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। লুয়ানার এই অদম্য যাত্রাকে বিনিয়োগকারীরা আগামীর প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক বড় প্রভাবক হিসেবে দেখছেন।