Home স্বাস্থ্য লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েট: স্নায়ুরোগ ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত

লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েট: স্নায়ুরোগ ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত

হেলথ ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের মৃগী, দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন এবং অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের মতো স্নায়বিক সমস্যার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে কিটোজেনিক ডায়েটসহ নানা খাদ্যাভ্যাস প্রয়োগ হয়ে আসছে। সম্প্রতি এর সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) ডায়েট গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে ইয়নসে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনের শিশু বিভাগের অধ্যাপক লি ইয়ং-মক এবং গ্যাংনাম সেভারেন্স হাসপাতালের শিশু স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগ, পুষ্টি টিম, সামাজিক কর্মী টিম ও সিজে ফ্রেশওয়ে যৌথভাবে প্রকাশ করেছেন বই লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মিল গাইড

অধ্যাপক লি ইয়ং-মক বলেন,
“লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েট শরীরের শক্তি বিপাককে বদলে বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের উপসর্গ উন্নত করতে সক্ষম। এটি শুধু ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকেও আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে।”

লো GI ডায়েট কীভাবে কাজ করে

প্রতিটি খাবারের একটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স স্কোর থাকে, যা খাবার খাওয়ার পর কত দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায় তা নির্দেশ করে। ৫৫ বা তার নিচে স্কোর থাকলে তা লো GI খাবার ধরা হয়। এই ধরনের খাবার খেলে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়।

এ ডায়েট শুধু রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো হজমজনিত সমস্যার উন্নতি ঘটায়। রক্তে হঠাৎ শর্করা বেড়ে গেলে যে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ হয়, তা নিয়ন্ত্রণে এনে মানসিক স্থিতিশীলতা আনে। একইসঙ্গে এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও স্নায়ুতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতা কমায়।

কেন সাধারণ মানুষকেও লো GI ডায়েট প্রয়োজন

খাবারের পর রক্তে দ্রুত শর্করা বাড়লে অগ্ন্যাশয়কে অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে হয়, যা ধীরে ধীরে প্যানক্রিয়াসকে দুর্বল করে এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ধমনী শক্ত হয়ে যায়, স্থূলতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়।

তাই সাধারণ মানুষের জন্যও “রিল্যাক্সড লো GI ডায়েট” অনুসরণ জরুরি। এর মূল লক্ষ্য হলো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কমানো। সাদা চাল, সাদা পাউরুটি ও চিনি বাদ দিয়ে বাদামি চাল, বহুশস্য চাল, পূর্ণ গমের রুটি ও আঁশযুক্ত শস্য বেছে নেওয়া উচিত।

কোন খাবার বেছে নেবেন

সাদা চালের বদলে ব্রাউন রাইস, বহুশস্য চাল, ডালভাত বা যবের ভাত

সাদা পাউরুটির বদলে গম বা রাই পাউরুটি

ময়দার নুডলসের বদলে বাকউইট নুডলস, হোল হুইট পাস্তা বা টোফু নুডলস

স্ন্যাকসে বাদাম, দই, হোল গ্রেইন সিরিয়াল

পানীয়তে পানি, চা, টাটকা ফল বা সবজির রস

ফল হিসেবে আপেল, টমেটো, বেরিজাতীয় কম-চিনি ফল

রান্নার কৌশল

আলু বা মিষ্টি আলু সেদ্ধ বা ভাপে রান্না করলে তাদের GI কম থাকে, ভাজা বা বেক করার চেয়ে। রান্নায় চিনি, কর্ন সিরাপ ও মধু কমিয়ে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, লেবু বা ভিনেগারের প্রাকৃতিক স্বাদ ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবারের সময় ক্রমও গুরুত্বপূর্ণ—প্রথমে সবজি, প্রোটিন ও চর্বি, শেষে কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার উত্থান ধীর হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লো GI ডায়েট শুধু স্নায়বিক রোগ নয়, বরং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংখ্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।