Home বিনোদন ক্যাসির বিস্ফোরক অভিযোগ: ‘চার দিন ধরে যৌন পার্টিতে বাধ্য করতেন’

ক্যাসির বিস্ফোরক অভিযোগ: ‘চার দিন ধরে যৌন পার্টিতে বাধ্য করতেন’

সংগৃহীত ছবি

বিনোদন ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী র‍্যাপ তারকা ও ব্যবসায়ী শন ‘ডিডি’ কম্বসের বিরুদ্ধে যৌন পাচার, র‌্যাকেট গঠন ও নারী নির্যাতনের ভয়াবহ সব অভিযোগ তুলে সরাসরি আদালতে সাক্ষ্য দিলেন তার সাবেক প্রেমিকা ক্যাসি ভেনচুরা। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ফেডারেল কোর্টে মঙ্গলবার এই সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালত চত্বরে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

ক্যাসি ভেনচুরা জানান, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি ডিডির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। শুরুতে তাকে “মুগ্ধকর শিল্পী ও সফল উদ্যোক্তা” মনে হলেও ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, এটি কেবলমাত্র বাহ্যিক মুখোশ। সম্পর্কের একপর্যায়ে ডিডি তাকে মাদক সেবনে বাধ্য করেন এবং “ফ্রিক-অফ” নামে পরিচিত যৌন পার্টিতে অংশ নিতে জোর করেন।
“৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলত এসব পার্টি। একবার চার দিনেও শেষ হয়নি। আমি অনেক সময় অপরিচিতদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হই, আর তিনি (ডিডি) এসব দৃশ্য উপভোগ করতেন,” বলেন ভেনচুরা।

তিনি আদালতকে আরও বলেন, এসব পার্টি যেন একটি পূর্ণকালীন চাকরিতে পরিণত হয়েছিল, যেখানে তার একমাত্র কাজ ছিল মাদক খাওয়া, যৌনতা এবং পরে শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করা।
“আমার জীবন থেকে আনন্দ, স্বাভাবিকতা সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল এসব পার্টি,” যোগ করেন তিনি।

ডিডির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। তিনি বর্তমানে র‌্যাকেট গঠন, যৌন পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত। দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড নিশ্চিত এবং আজীবন কারাবাসও হতে পারে।

ক্যাসি আদালতে আরও জানান, ডিডির সঙ্গে সম্পর্কের শুরুর দিকে একটি মায়ামি ট্রিপে তারা প্রথমবার যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হন। সেখানে মদ ও এক প্রকার এক্সট্যাসি (যাকে তিনি “ব্লু ডলফিন” নামে উল্লেখ করেন) খাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

ভেনচুরা বলেন, ডিডি তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন—কি পোশাক পরবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন, এমনকি কোথায় থাকবেন তাও তিনি নির্ধারণ করতেন। এমনকি তাকে কাছাকাছি একটি অ্যাপার্টমেন্টে রেখে নজরদারি চালাতেন এবং ফোন ধরতে দেরি হলে স্টাফ পাঠিয়ে তাকে খুঁজে আনতেন।

শুধু মানসিক নয়, বরং শারীরিক নির্যাতনের কথাও তিনি বিস্তারিত বলেন।
“আমার কপালে গাঁট হয়ে যেত, ঠোঁট ফেটে যেত, চোখ ফুলে যেত। কখনো মাথায় লাথি, কখনো মাটিতে ফেলে ঘুষি মারতেন,”—আদালতে বলেন ক্যাসি।

সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, ডিডি এসব যৌন পার্টির ভিডিও ধারণ করতেন এবং তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতেন।
“এই ভিডিওগুলো সবসময় তার হাতে ছিল, আমি ছিলাম আতঙ্কে। কখন যে তিনি সেগুলো প্রকাশ করে দেন—এই ভয়ই আমার জীবন গ্রাস করেছিল,” বলেন তিনি।

অভিযোগ আরও আছে, ডিডি বিভিন্ন শহরে নিজের বাসাগুলোর নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রাখতেন। কখনও এসব বন্দুক বাইরে বের করে রাখতেন নিরাপত্তা কর্মীরা, যা ছিল “ভয়ের কৌশল” বলেই ধারণা করেন ক্যাসি।

ডিডির সন্তান কুইন্সি ব্রাউন, চান্স কম্বস ও ডি’লিলা স্টার কম্বসও আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং সংবাদমাধ্যমে তাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে এই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদন ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলছে। পপ কালচারের অন্যতম তারকার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ডিডির পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করছেন, তার জীবনধারা “স্বেচ্ছাচারী ও অস্বাভাবিক হতে পারে”, কিন্তু তা অপরাধ নয়। তবে মামলার বাদীপক্ষ বলছে, এটি কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের ইস্যু নয়—এটি ক্ষমতার অপব্যবহার, সহিংসতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।