ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-৫
মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হজ শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি এক বিশাল মানবিক, আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী যাত্রা। এই যাত্রার প্রতিটি ধাপ আমাদের শেখায় আত্মসংযম, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান, এবং আল্লাহর প্রতি অন্ধ আনুগত্য। মিনার ময়দান ও সেখানে শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ তার অনন্য প্রকাশ।
মিনার পথে ফিরে আসা:
আরাফাত থেকে সূর্যাস্তের পর হাজীরা মুজদালিফায় রাত যাপন করেন। সেখান থেকেই তারা মিনার পথে রওনা হন পরদিন সকালে, ১০ জিলহজ তারিখে। এ দিনটিই ঈদের দিন। কিন্তু হাজীদের জন্য এটি ঈদ উদযাপনের দিন নয়, বরং ত্যাগ, কঙ্কর নিক্ষেপ এবং কুরবানির দিন।
হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে হাজীরা জামারাতুল আকবা বা বড় শয়তানের স্তম্ভে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এটি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই স্মৃতিকে বহন করে, যেখানে তিনি শয়তানের প্ররোচনায় সাড়া না দিয়ে পুত্র কুরবানি করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ: এক প্রতীকী প্রতিবাদ:
জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ শুধু এক ঐতিহাসিক স্মৃতি নয়, এটি প্রতীকী প্রতিবাদ—অশুভ, শয়তানি প্ররোচনা এবং আত্মতৃপ্তির বিরুদ্ধে। এই আমলে হাজীরা শিখে নেন, জীবনের প্রতিটি মোড়ে যেখানে শয়তান ধোঁকা দিতে চায়, সেখানে বিশ্বাস, দোয়া ও দৃঢ়তা নিয়ে তার মোকাবিলা করতে হবে।
কঙ্কর নিক্ষেপের সময় মুখে উচ্চারণ করা হয়—
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার!”
প্রতিটি কঙ্কর যেন একজন মুসলমানের প্রতিজ্ঞা—আমি আল্লাহর পক্ষেই থাকব।
কুরবানি: সর্বোচ্চ ত্যাগের চূড়ান্ত প্রকাশ:
শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের পর হাজীরা কুরবানি দেন। এটি সেই আত্মত্যাগের মহৎ শিক্ষা, যেখানে একজন মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়তম বস্তুকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন—এ এমন ত্যাগ, যা ইতিহাসে অদ্বিতীয়। আল্লাহ তাঁর আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাইলের স্থলে একটি দুম্বা প্রেরণ করেছিলেন।
হাজীগণ সেই কুরবানির স্মরণেই পশু উৎসর্গ করেন। ইসলামে এই কুরবানি শুধুমাত্র মাংস বিলানো নয়, বরং তা নিজের ভেতরের কামনা, গর্ব, অহংকার এবং স্বার্থপরতাকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার প্রতীক।
চুল কাটা ও ইহরাম ত্যাগ:
কুরবানি সম্পন্ন হলে হাজীরা চুল কেটে বা সম্পূর্ণ মুণ্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করেন। এটি ইহরাম অবস্থা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক পোশাকে ফিরে আসার ইঙ্গিত।
এই রীতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যে আত্মিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আমরা হজে প্রবেশ করি, তার শেষে একটি শুদ্ধ ও নতুন আত্মার জন্ম হয়।
মিনা, কঙ্কর নিক্ষেপ ও কুরবানির রীতির মধ্য দিয়ে হজের যাত্রা প্রবেশ করে আত্মত্যাগের চূড়ায়। এখানে শরীর দিয়ে নয়, মন ও আত্মা দিয়ে হজ সম্পন্ন হয়। এই ধাপে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শয়তানকে প্রত্যাখ্যান ও আত্মত্যাগের শিক্ষা একজন হাজীর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
পরবর্তী পর্ব: তাওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তাওয়াফ—আলিঙ্গনের শেষ মুহূর্ত
👉 আরও খবর ও বিশ্লেষণ পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন বিজনেসটুডে২৪.কম।
👉 প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে।