আমিরুল মোমেনিন: বলিউড বহুদিন ধরেই পুরুষপ্রধান এক ইন্ডাস্ট্রি। যেখানে নায়কই ছিলেন গল্পের কেন্দ্র, আর নায়িকারা ছিলেন শুধু সাজসজ্জা কিংবা প্রেমের বাহানা। কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক দেয়ালে বারবার আঘাত করেছেন কিছু সাহসী নারী, যাঁরা শুধু অভিনয়ের গুণে নয়, তাঁদের অবস্থান, প্রতিবাদ ও লড়াইয়ের জন্য আজও স্মরণীয়।
১. স্মিতা পাটিল – মেকআপহীন মুখে নারীত্বের জাগরণ
সত্তরের দশকে যখন নায়িকারা ছিলেন সাজসজ্জার প্রতীক, তখন স্মিতা পাটিল ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন মেকআপ ছাড়া, বাস্তব জীবনঘেঁষা চরিত্রে।
‘ভূমিকা’, ‘মীরাচাঁদ’, ‘মন্দন’ সিনেমাগুলোতে তিনি তুলে ধরেছেন মহিলাদের আত্মপরিচয়, অধিকার ও স্বাধীনতা।
তিনি বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরেও নারীর স্বাধীন অস্তিত্ব তুলে ধরার প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাঁর আগমন যেন ছিল বলিউডে ‘নারীবাদী ভাষ্য’-র সূচনা।
২. শাবানা আজমি – প্রতিবাদের কণ্ঠ, মঞ্চ থেকে সংসদে
শুধু অভিনেত্রী হিসেবেই নয়, শাবানা আজমি ছিলেন সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও প্রতিবাদী কণ্ঠ।
‘অর্থ’, ‘মাণ্ডি’, ‘গোধুলি’, ‘ফায়ার’-এর মতো সিনেমায় তিনি একা একা লড়ে গেছেন নারী নিপীড়ন, যৌনতার দ্বিচারিতা ও পারিবারিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে।
শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও তিনি মজদুর অধিকার, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
৩. রেখা – নীরব বিদ্রোহের অনন্ত সৌন্দর্য
একসময় ‘গ্ল্যামার গার্ল’ হিসেবে চিহ্নিত হলেও, রেখা নিজের অভিজ্ঞতা, ব্যথা আর সংবেদনশীলতা দিয়ে গড়ে তোলেন এক অনন্য নারীব্যক্তিত্ব।
‘উমরাও জান’, ‘ইজাজত’, ‘খুবসুরত’-এ তিনি নারীর সংবেদন, প্রেম, স্বাধীনতা আর একাকীত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ব্যক্তিজীবনের নানা বিতর্ক, অপমান ও একাকীত্বের মাঝেও কখনও মুখ খোলেননি, বরং নিজের অস্তিত্বকে দাঁড় করিয়েছেন নিরবে, গৌরবে।
৪. তাপসী পান্নু – বর্তমানের সোজাসাপ্টা কণ্ঠ
এই প্রজন্মের অন্যতম সরব মুখ তাপসী পান্নু। তিনি শুধু ‘পিংক’, ‘থাপ্পড়’, ‘নাম শাবানা’-র মতো সিনেমায় নয়, বাস্তব জীবনেও বলেন স্পষ্ট কথা।
তিনি মিডিয়াকে প্রশ্ন করেন, “নারীর চরিত্র নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা হয় কেন? পুরুষদের দায় কই?”
তাঁর সিনেমা ও সাক্ষাৎকারে উঠে আসে এক নতুন প্রজন্মের প্রতিবাদ—সংবেদনশীল, যুক্তিপূর্ণ ও সাহসী।
৫. দীপিকা পাড়ুকোন – মানসিক স্বাস্থ্যের কণ্ঠস্বর
বলিউডে একসময় ডিপ্রেশন শব্দটাই ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু দীপিকা সাহস করে নিজের মানসিক অসুস্থতার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি অনেকদিন আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছি।”
তারপর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন Live Love Laugh Foundation, যা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।
বলিউডের মতো ভানভর্তি দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে এমন স্বীকারোক্তি অসামান্য। অনেক তরুণী তার মাধ্যমে সাহস পান।
বলিউডে নারী কণ্ঠের মূল্য কতটা?
এখনও অনেক পরিচালক মনে করেন, “নারীকেন্দ্রিক ছবি বক্স অফিসে চলে না”। কিন্তু সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন বিদ্যা বালান, আলিয়া ভাট, কিয়ারা আদবানিরা।
আজ নারী তারকারাও সিনেমা প্রযোজনা করেন, চিত্রনাট্য তৈরি করেন, নিজের পারিশ্রমিকের দাবি তুলতে ভয় পান না।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—নারীকে ঠিক কতটা স্বাধীনতা দেয় বলিউড?
📣 মতামত দিন, শেয়ার করুন
আপনার মতে, বলিউডে নারী তারকাদের সংগ্রাম কতটা বদল এনেছে? তাঁরা কি সত্যিই পুরুষতন্ত্রের দেয়ালে ফাটল ধরাতে পেরেছেন?