বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিমালা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হতে যাচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই শুল্ক হার ১০% থেকে শুরু করে ৫০% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর। বিশেষ করে চীন, কানাডা, ব্রাজিল, বাংলাদেশসহ ২৪টিরও বেশি দেশ এই নতুন শুল্কের আওতায় পড়বে বলে জানা গেছে।
বিশ্বের শিপিং খাত এই পরিস্থিতিতে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত শুল্ক হার কার্যকর হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আগেভাগেই পণ্য আমদানি করে নিচ্ছে, যাতে করে নতুন শুল্কের প্রভাব এড়ানো যায়। এর ফলে বিভিন্ন দেশের বন্দরে জাহাজের চাপ বেড়েছে এবং কনটেইনার স্পেসের সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের রুট পুনর্বিন্যাস করছে। চীন থেকে সরাসরি আমদানি কমিয়ে ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, ভারতসহ বিকল্প উৎসে ঝুঁকছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরে চাপ বাড়ছে এবং নতুন ট্রেড রুট গড়ে উঠছে। তবে এই পরিবর্তন স্বল্পমেয়াদে শিপিং খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরবরাহ চেইনে জটিলতা তৈরি করছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ওপর ৩৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের আশঙ্কা রয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে চাই। অতিরিক্ত শুল্ক আমাদের রপ্তানি সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।”
বিশ্বজুড়ে এই শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কানাডা, ব্রাজিল, চীনসহ একাধিক দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। একটি নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক শিপিং খাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে শিপিং কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে শিপিং খাতের জন্য করণীয় হলো: সরবরাহ চেইনের বহুমুখীকরণ, বিকল্প রুট ও উৎস খোঁজা, এবং শুল্ক নীতির পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে একটি স্থিতিশীল বাণিজ্য পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।