নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: বাংলাদেশের উর্বর মাটিতে বছরে প্রায় ১৬০ রকমের সবজি ও নানা প্রকার ফল উৎপন্ন হয়। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা থেকে শুরু করে শীতকালীন সবজি পর্যন্ত—উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশগুলোর একটি। তবে দীর্ঘদিন ধরে ফলমূল ও সবজি শুধুই কাঁচা অবস্থায় বিক্রি হয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশে এ খাত রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে নতুন পরিচিতি পাচ্ছে।
উৎপাদন ও বাজার
প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টন ফলমূল ও সবজি উৎপাদিত হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে হিমায়িত সবজি, প্রক্রিয়াজাত ফল, আচার, জুস ও ক্যানড পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিল্প সম্ভাবনা
ফলমূল ও সবজি থেকে তৈরি করা যায়—
হিমায়িত সবজি (Frozen Vegetables): যেমন বরবটি, ফুলকপি, মটরশুঁটি।
জুস ও পানীয়: আম, লিচু, কমলা, পেয়ারা।
ক্যানড ফুড: আনারস, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল।
ডিহাইড্রেটেড প্রোডাক্ট: শুকনো আম, কলা চিপস, শুকনো পেয়ারা।
আচার ও সস: আম, মরিচ ও টমেটো সস।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে শুধু হিমায়িত সবজি ও ফল প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।
কৃষকের লাভ ও কর্মসংস্থান
প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে ওঠায় কৃষকরা তাদের পণ্যের ভালো দাম পাচ্ছেন। আগের মতো মৌসুম শেষে ফল-সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমেছে। একইসঙ্গে কারখানা, হিমাগার ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ
- আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা ও খাদ্য নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন জটিলতা
- পর্যাপ্ত হিমাগার ও কোল্ড-চেইন সরবরাহ ব্যবস্থার অভাব
- ব্র্যান্ডিং ও বাজার সম্প্রসারণে দুর্বলতা
- প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের ঘাটতি
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
সরকার ইতোমধ্যেই ফলমূল ও সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে কর ছাড়, রপ্তানি প্রণোদনা এবং কোল্ড-চেইন অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করছে। উদ্যোক্তাদের মতে, “যদি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎপাদন করা যায়, তবে ফলমূল ও সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্প আগামী এক দশকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাতে পরিণত হবে।”