ভিআইপি গ্যালারির হাসি বনাম সাধারণের কান্না
কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: একদিকে গ্যালারিতে বসে থাকা হাজারো ফুটবলপাগল দর্শকের হাহাকার, অন্যদিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সেলিব্রেটিদের ‘এক্সক্লুসিভ’ ফটোসেশন। শনিবারের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন দেখল এই দুই ভিন্ন চিত্র। আর এই বৈষম্যের প্রতীক হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি ছবি, যা সাধারণ ভক্তদের ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ হয়ে বিঁধল।
ফ্রেমে বন্দি নক্ষত্ররা, কিন্তু দর্শকরা কোথায়?
শনিবার বিশ্বজয়ী লিওনেল মেসিকে স্বাগত জানাতে যুবভারতীতে উপস্থিত ছিলেন টলিউড অভিনেত্রী শুভশ্রী। মেসি, লুইস সুয়ারেজ এবং রডরিগো ডি’পলের সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতেই তা ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, ফুটবল তারকাদের সান্নিধ্য পেয়ে উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী। কিন্তু এই ঝকঝকে ছবির ঠিক উল্টো পিঠেই ছিল সাধারণ দর্শকদের বঞ্চনার গল্প।
ধৈর্য্যের বাঁধ এবং বিশৃঙ্খলা
মাঠের বাইরে এবং গ্যালারিতে তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত। চড়া দামে টিকিট কেটে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রিয় তারকাকে একনজর দেখার সুযোগ পাননি হাজারো দর্শক। উল্টো নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসি মাঠ ছাড়লে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে জনতার। তৈরি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। ঠিক সেই সময়েই যখন শুভশ্রীর প্রোফাইল থেকে ভেসে আসে মেসির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
নেটিজেনদের প্রশ্নবাণ: ফুটবলপ্রেম নাকি শুধুই প্রচার?
শুভশ্রীর পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে আছড়ে পড়েছে নেটিজেনদের তীব্র ভর্ৎসনা। ফুটবল আবেগের চেয়ে এখানে ‘ভিআইপি কালচার’ বা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তিই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এক ক্ষুব্ধ নেটিজেন প্রশ্ন তুলেছেন, “খেলা বোঝেন? আদৌ দেখেন? নাকি শুধুই ছবি তোলার জন্য যাওয়া?”
আরেকজনের মন্তব্য আরও তীক্ষ্ণ, “দর্শকের টাকায় ইভেন্ট, আর মেসির সঙ্গে ফটো সেশন করেন আপনারা? সাধারণ মানুষ কি শুধু পয়সা দেওয়ার জন্য?”
বিশ্লেষণ: ব্যবধানের নাম ‘ভিআইপি পাস’
শুভশ্রী হয়তো একজন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবেই সেখানে গিয়েছিলেন এবং সুযোগ পেয়ে ছবি তুলেছেন—যা যে কেউ করত। কিন্তু টাইমিং এবং সাধারণ দর্শকদের প্রতি আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাই এই ছবিটিকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ফুটবল যেখানে গণমানুষের খেলা, সেখানে যখন সাধারণ দর্শকদের আবেগকে উপেক্ষা করে কেবল তারকাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়, তখন সেই ব্যবধান মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শুভশ্রীর ছবিটি কেবল একটি সেলফি নয়, এটি যেন সেই অদৃশ্য দেয়ালের প্রতিচ্ছবি—যা সাধারণ দর্শক আর তাদের স্বপ্নের নায়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে, অথচ প্রভাবশালীদের জন্য সেই দরজা অবারিত।
আপনার মতামত জানান:শুভশ্রীর এই ছবি কি শুধুই ব্যক্তিগত আনন্দ, নাকি সাধারণ দর্শকদের প্রতি আয়োজকদের উদাসীনতার প্রমাণ? কমেন্টে আপনার যুক্তি তুলে ধরুন এবং প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।










