Home কলকাতা আমেরিকার শুল্ক নীতিতে ভারতীয় চায়ের বাজারে ধাক্কা

আমেরিকার শুল্ক নীতিতে ভারতীয় চায়ের বাজারে ধাক্কা

কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: যুক্তরাষ্ট্রে চা রপ্তানিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক আমদানি শুল্ক নীতির জেরে দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাই এবং অসমের চা শিল্প পড়েছে চরম দোলাচলে। অর্থডক্স এবং সিটিসি ধরনের চা আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয় হলেও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে ভারতের এই রপ্তানি বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

চা বোর্ডের হিসাব বলছে, গত অর্থবছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমেরিকায় চা রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। আর এই রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় ৭০.৯৭ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আমেরিকার চা বাজারে ভারতের শেয়ার প্রায় ১৪ শতাংশ। এখন সেই বাজার ধরে রাখা নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলে।

উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং চা বিশ্ববিখ্যাত অর্থডক্স প্রজাতির জন্য। অন্যদিকে ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলে উৎপন্ন হয় সিটিসি ও ব্ল্যাক টি। অসমেও এই দুই ধরনের চায়েরই সমান উৎপাদন হয় এবং তা আমেরিকায় রপ্তানি হয় নিয়মিত। কিন্তু আমদানি শুল্ক বাড়লে চায়ের দামও বাড়বে। ফলে ভারতীয় চা আর সেদেশের সাধারণ ভোক্তার পছন্দের তালিকায় থাকবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

এই সুযোগে কেনিয়ার মতো চা রপ্তানিকারক দেশ বাড়তি সুবিধা পেয়ে যেতে পারে। আফ্রিকার কোনও দেশের ওপর এখনো আমেরিকা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেনি। ফলে রপ্তানির দৌড়ে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আমেরিকায় মূলত আর্জেন্টিনার চা চলে বেশি, যদিও ভারতের অংশও নেহাত কম নয়।

চা শিল্প সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, আমেরিকা যদি ইউরোপ কিংবা ব্রিটেন থেকে চা আমদানি শুরু করে, তবে ভারতীয় চায়ের বিপণনক্ষেত্রে আরেক ধাক্কা আসতে পারে। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা গ্রেট ব্রিটেনে ভারতীয় চায়ের ওপর শুল্ক নেই বললেই চলে। সেই চা-ই ফের আমেরিকায় রপ্তানি হতে পারে, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতায় ফেলবে।

অসমের প্রখ্যাত চা শিল্পপতি প্রভাতকমল বেজবড়ুয়া মনে করেন, ‘২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হলেও তা সরাসরি বিক্রয় মূল্যের ওপর নয়, বরং আমদানি প্রবেশমূল্যের ওপর। ফলে এর প্রভাব অনেকটাই নির্ভর করছে খুচরো বিক্রেতার দামে, যা আগেই কিছুটা বাড়িয়ে রাখা হয়।’ অন্যদিকে টিপা-র চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসলের বক্তব্য, ‘আমাদের চায়ের গুণমান কেনিয়া বা শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক উন্নত। আমেরিকার সচেতন ক্রেতারা গুণমানকে অগ্রাধিকার দেন। আশা করি, এই বার্তাও বাজারে প্রভাব ফেলবে।’

সিস্টা-র সর্বভারতীয় সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর মতে, ‘আমাদের এখান থেকে ব্ল্যাক টি এবং সিটিসি চা-ই বেশি যায় আমেরিকায়। এই বাজার ধরে রাখতে গুণগতমানের প্রচার আরও জোরদার করতে হবে।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিস্থিতিকে বলা যেতে পারে এক ধরনের ‘চ্যালেঞ্জ অফ পোটেনশিয়াল শিফট’—যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নীতিগত রদবদলে বিপর্যস্ত হতে পারে দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প।