Home আইন-আদালত রাজাকারের নাতিপুতি’ উসকানিতে ছাত্র হত্যা: তদন্তে শেখ হাসিনার নাম

রাজাকারের নাতিপুতি’ উসকানিতে ছাত্র হত্যা: তদন্তে শেখ হাসিনার নাম

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জুলাই-আগস্টের গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১২ মে) দুপুরে ট্রাইব্যুনালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি পৃথক অভিযোগ গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি অভিযোগ প্রকাশ করেছেন তদন্তকারীরা।

প্রথম অভিযোগ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যায়িত করেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় কর্মীদের উসকে দেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হতে। তার এই উসকানির জেরেই পরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারি দলের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন সংঘটিত হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তদন্ত সংস্থা তার একাধিক টেলিফোন আলাপ জব্দ করেছে, যেখানে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান করতে শোনা যায়। এই সংলাপগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি নির্দেশ হিসেবে গণ্য করে দ্বিতীয় অভিযোগটি আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই অপরাধগুলোর পেছনে ছিলো স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা। যেসব প্রমাণ সংগৃহীত হয়েছে, তা বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হবে।”

এর আগে, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়।

জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে চলা ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়। এই সময়ে আনুমানিক দেড় হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আন্দোলন দমনে সরকারের নির্দেশেই এসব সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ হওয়ায় এখন আদালতের সামনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটররা।