বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক রাতেই ঘটল অকল্পনীয় এক ট্র্যাজেডি। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শোকে ভেঙে পড়লেন বাবা, মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তান খন্দকার আবু সাইদ দলু (৭০)। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি। এর আগে মারা যান তার ছেলে খন্দকার ইমারত হোসেন তালেশ (৫৬)।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে।
শেষ দেখাও হলো না
পারিবারিক সূত্র জানায়, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তালেশকে ভর্তি করা হয় মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে। অবস্থা অবনতি হলে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তখনও তার বাবা মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে শয্যাশায়ী। ছেলের নিথর দেহ আর একবার চোখে দেখারও সুযোগ পেলেন না তিনি। শুধু মৃত্যুসংবাদ শুনেই বুক ভেঙে গেল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ দলুর। চোখের কোণে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর সঙ্গে শেষবারের মতো দীর্ঘশ্বাস মিলিয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
শোকের মাতম গোটা গ্রামে
এলাকাজুড়ে তখন এক অবর্ণনীয় শোকের আবহ। হাসপাতালের করিডরে স্বজনদের কান্না, বাড়িতে নারী-পুরুষ-শিশুর বুকফাটা হাহাকার—সব মিলিয়ে গোটা গ্রাম যেনো কেঁপে ওঠে। কেউ ছেলের জন্য কাঁদছেন, কেউ আবার বাবার লাশের সামনে হাহাকার করছেন। রাতভর শোকের মাতমে ডুবে ছিল খামারপাড়া।
পাশাপাশি চিরনিদ্রা
বুধবার রাত ১১টার দিকে প্রথমে ছেলে তালেশকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গোড়াই জমিদারবাড়ি মাঠে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার ও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ দলুকে।
শেষ পর্যন্ত বাবা-ছেলে পাশাপাশি শায়িত হন একই কবরস্থানে—একটি কবর অন্যটির এতটাই কাছে যে মনে হয়, মৃত্যুতেও তারা যেন একে অপরকে আঁকড়ে আছেন।
স্মৃতিচারণে স্বজন ও প্রতিবেশী
গোড়াই এলাকার বাসিন্দা মো. বাবুল সিকদার বলেন, “এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। একসাথে দুই জানাজা, দুই কবর—আমরা নিজের চোখে দেখে শিউরে উঠেছি। মনে হচ্ছে গ্রাম থেকে আলো নিভে গেছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, “অল্প সময়ের ব্যবধানে বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু সত্যিই মর্মান্তিক। পুরো এলাকার জন্য এটি এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
👉 শেষবার ছেলের মুখ দেখতে পারলেন না বাবা। তবে জীবনে যেমন ছিলেন পরস্পরের অবলম্বন, মৃত্যুতেও তারা পাশাপাশি শায়িত হয়ে রইলেন—শোক আর ভালোবাসায় মোড়া এক চিরন্তন গল্প হয়ে।