বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মেহেরপুর: ঢাকার উত্তরার আকাশ থেকে যখন আগুন জ্বলে পড়ল মাটিতে, তখন রজনী খাতুনের হাতে ছিল মেয়ের খাবারের ছোট একটি ব্যাগ। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল তার, কিন্তু কে জানত এই যাত্রাই হবে জীবনের শেষ যাত্রা।
গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামের রজনী খাতুন (৩৭) ছিলেন মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের মেয়ে। ঢাকায় স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছিলেন। প্রতিদিনের মতো সোমবারও বের হয়েছিলেন মাইলস্টোন স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে আনতে। কিন্তু বিধ্বস্ত বিমানের ছিন্নভিন্ন ধ্বংসাবশেষের নিচে চিরদিনের জন্য চাপা পড়ে গেল তাঁর সব স্বপ্ন, ভালোবাসা আর মাতৃত্ব।
মেয়েকে বাঁচালেও নিজে আর ফিরতে পারলেন না। মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলেই। তাঁর ভাই আশিক আহমেদ কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “রজনী আপু প্রতিদিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল। হঠাৎই চারপাশ কেঁপে উঠল। লোকজন ছুটছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানি, আমার বোন আর নেই। কিন্তু ভাগনি ঝুমঝুম খাতুন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে।”
মর্মান্তিক এই মৃত্যু সংবাদে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে রজনীর পৈতৃক গ্রাম বাওট। রাত পেরিয়ে মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মরদেহ এসে পৌঁছায় বাবার বাড়িতে। কান্নার রোল পড়ে যায় পাড়ায়। কিন্তু সেই কান্না স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ — মাত্র পাঁচ মিনিট রাখা হয় বাবার বাড়িতে, এরপর নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে স্বামীর বাড়িতে। বাবার ভিটেমাটিতেও শেষবারের মতো দীর্ঘ সময় থামেনি রজনী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিয়ামত আলী জানান, “মেয়ের জন্য গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ভাগ্য অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। পরিবারটা ভেঙে গেল মুহূর্তে।”
জীবন কতটা অনিশ্চিত, তা যেন রজনী খাতুনের মৃত্যু আবারও মনে করিয়ে দিলো। একটি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়া, আর এক ঝটকায় শেষ হয়ে যাওয়া জীবনের গল্প — যেন কষ্টের অক্ষরে লিখে গেলো এক ইতিহাস।