Home বিনোদন গ্রামের প্রাণ, ঐতিহ্যের গর্ব: পাকিস্তানের ষাঁড়ের লড়াই

গ্রামের প্রাণ, ঐতিহ্যের গর্ব: পাকিস্তানের ষাঁড়ের লড়াই

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

পাঞ্জাবের খোলা প্রান্তর কিংবা সিন্ধু নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে যখন শীত নামে, তখন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের নীরবতা ভেঙে দেয় এক অন্যরকম উন্মাদনা। ঢোলের বোল, লোকজনের চিৎকার আর উত্তেজনায় কাঁপে মাঠ। ষাঁড়ের লড়াই শুরু হয় পাকিস্তানের গ্রামীণ সংস্কৃতির এক চিরায়ত প্রতীক।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও সিন্ধ অঞ্চলে শীতকালে আয়োজন করা হয় এই ঐতিহ্যবাহী লড়াইয়ের। এটি কেবল বিনোদন নয়, বরং কৃষিপ্রধান সমাজে শক্তি, সম্মান ও ঐতিহ্যের প্রতীক। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘মাল্লা গরদা’ বা ‘বেল লড়াই’। এই লড়াইয়ের পেছনে থাকে মাসের পর মাসের প্রস্তুতি, ঘাম ঝরানো প্রশিক্ষণ, আর কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের অহংকার।

প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির কঠিন রীতি

একটি লড়াকু ষাঁড় গড়ে তুলতে বছরের পর বছর সময় লাগে। ষাঁড়গুলোকে শিশু বয়স থেকেই আলাদাভাবে লালন-পালন করা হয়। তাদের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য, নিয়মিত মালিশ, এমনকি কিছু এলাকায় বিশেষ সঙ্গীত বাজিয়ে ব্যায়াম করানো হয়। দৈনিক হাঁটানো, দৌড়ানো ও কৃত্রিম প্রতিপক্ষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে বাড়ানো হয় তাদের শারীরিক ক্ষমতা।

লড়াইয়ের দিন ষাঁড়কে সাজিয়ে তোলা হয় ঘাড়ে বাঁধা হয় রঙিন কাপড়, শিংয়ে লাগানো হয় রঙিন সুতা ও ঘন্টা। মালিকেরা গর্বভরে বলে থাকেন, ‘‘এ আমার পরিবারের গর্ব।’’

লড়াইয়ের নিয়ম ও উত্তেজনা

ষাঁড়ের লড়াই সাধারণত এক খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিপক্ষ দুই ষাঁড়কে একে অপরের মুখোমুখি আনা হয়। কোনো অস্ত্র বা মারাত্মক আঘাত এখানে নেই লড়াই হয় কেবল ধাক্কাধাক্কি ও কৌশলে প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করার মধ্য দিয়ে। কেউ যদি পেছনে সরে যায় বা পালায়, তাকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়।

গোটা গ্রাম কিংবা আশপাশের অঞ্চল থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হয় এই লড়াই দেখতে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীরা স্পনসর করেন লড়াইয়ের আয়োজন। কখনো কখনো বিজয়ী ষাঁড়ের মালিককে দেওয়া হয় মূল্যবান পুরস্কার—গরু, নগদ অর্থ কিংবা সোনার অলঙ্কার পর্যন্ত।

বিতর্ক ও সমালোচনাও আছে

যদিও এই লড়াই অনেকের কাছে ঐতিহ্যের অংশ, তবে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো এর কড়া সমালোচনা করে। তাদের মতে, লড়াইয়ের সময় অনেক সময় ষাঁড় আহত হয়, মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট পায়। তবে স্থানীয়রা দাবি করেন, তারা কখনো ষাঁড়দের আঘাত করেন না এবং এ লড়াই প্রকৃতির অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়।

ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার টানাপড়েন

বর্তমানে পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে এই লড়াই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তবু গ্রামীণ অঞ্চলে তা এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যমে এই লড়াইয়ের ভিডিও প্রকাশ করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে এই অজানা ঐতিহ্য।

ষাঁড়ের লড়াই পাকিস্তানের গ্রামীণ সমাজে কেবল একপ্রকার প্রতিযোগিতা নয়, বরং তা এক অন্তর্নিহিত সংস্কৃতি, শক্তি ও গর্বের বহিঃপ্রকাশ। যতই আধুনিকতার ঢেউ আসুক, গ্রামের মাঠে শিং ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বিশাল শরীরের সংঘর্ষ যে জনমানুষের আবেগ হয়ে গেঁথে আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।