আ্ন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপের সড়কে এখন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুর শোনা যাচ্ছে। পেট্রোল ও ডিজেলের গন্ধমাখা চেনা বাস্তবতা থেকে বিদ্যুতের নিঃশব্দ গতি আর সবুজ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা মহাদেশ। বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির উত্থান এখন শুধু একটি প্রযুক্তিগত বিকল্প নয়, বরং হয়ে উঠেছে এক নতুন জীবনধারা ও অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি।
তুরস্কের সাম্প্রতিক গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান এ ধারারই প্রতিফলন। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে বিক্রি হওয়া গাড়ির ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশই ছিল বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড প্রযুক্তিনির্ভর। এই সংখ্যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং ইউরোপের একটি বৃহৎ ও উদীয়মান বাজারের ভেতরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
বৈদ্যুতিক গাড়ির এই উত্থান হঠাৎ করে আসেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশবান্ধব নীতিমালা, কার্বন নিঃসরণ কমানোর বাধ্যবাধকতা এবং ফসিল জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ সব মিলিয়ে কয়েক বছর ধরেই তৈরি হচ্ছিল এই পরিপ্রেক্ষিত। ২০৩৫ সালের মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ডিজেল ও পেট্রোলচালিত নতুন গাড়ি নিষিদ্ধের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটিও এই পরিবর্তনের গতি বাড়িয়েছে।
জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন ও নরওয়ে ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। উন্নত চার্জিং অবকাঠামো, কর রেয়াত, ভর্তুকি ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় ছাড় এসব কারণে গ্রাহকরা আগের চেয়ে দ্রুত ঝুঁকছেন বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে।
তবে সবকিছুই শুধু প্রযুক্তি নয়। ইউরোপের ভোক্তারা পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুতে অনেক বেশি সচেতন। ফলে তারা চায় এমন যানবাহন, যা পরিবেশবান্ধব, কম শব্দদূষণকারী এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই মনোভাবও বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
তুরস্কে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি গত বছরের তুলনায় ১৩৮ শতাংশ বেড়েছে, হাইব্রিড গাড়ির প্রবৃদ্ধি ১০২ শতাংশের বেশি। এমন প্রবৃদ্ধি কেবল প্রযুক্তিগত সুবিধা নয়, বরং জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং বৈশ্বিক অটোমোবাইল শিল্পের দিক পরিবর্তনের ফল।
তবে এ যাত্রাপথ নিঃশঙ্কট নয়। এখনও চার্জিং স্টেশন পর্যাপ্ত নয় অনেক দেশে, ব্যাটারির দামও তুলনামূলক বেশি। তবে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সরকারগুলো একযোগে কাজ করছে। যেমন ইউরোপজুড়ে দ্রুতগতি চার্জিং স্টেশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ব্যাটারি উৎপাদনে বিনিয়োগ ও গবেষণার তহবিল বাড়ানো হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এই তিন শক্তি প্রধান চালক। কিন্তু ইউরোপের বিশেষত্ব হলো, এখানকার পরিবর্তন শুধু অর্থনৈতিক নয়, নীতিনির্ধারণী ও মানসিক পরিবর্তনের ফল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউরোপের শহরগুলোতে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ির গতি নিঃশব্দে ছুটে চলে, তখন তা এক নতুন যুগের সূচনা করে—যেখানে পরিবেশ, প্রযুক্তি ও অর্থনীতি মিলে গড়ে তুলছে ভবিষ্যতের পরিবহণ ব্যবস্থা।