আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দুই বছর প্রেমের পর ২২ বছর বয়সী রামিতা ও শিলু (ছদ্মনাম) গত বৃহস্পতিবার নেপালের সিন্ধুলির সুনকোশী গ্রামীণ পৌরসভায় গিয়ে তাঁদের বিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করেন।
তাঁদের আশা ছিল, প্রক্রিয়াটি হবে সহজ ও শান্তিপূর্ণ। কারণ ২০২৩ সালের জুনে নেপালের সর্বোচ্চ আদালত সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের বৈবাহিক অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবে তাঁরা পেলেন উপেক্ষা, প্রত্যাখ্যান এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের মাধ্যমে জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো তাঁদের।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা এই ধরনের বিয়ের আইনি বিষয় সম্পর্কে জানেন না। একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানি না। পুরো বিষয়টা বুঝতে আমাদের ১৫ দিন সময় লাগবে।”
এরপর বাধ্য হয়ে যুগলটি অপেক্ষা করতে রাজি হন। কিন্তু তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।
রামিতার পরিবার তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে পুলিশে ‘নিখোঁজ’ অভিযোগ দায়ের করে। পরদিন উভয় পরিবারের সদস্যরা ললিতপুর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আলাদা আলোচনায় রামিতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি শিলুকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু তাঁর পরিবার তাতে রাজি হয়নি।
পুলিশ নিরাপত্তার কারণে দু’জনকে জওলাখেল মহিলা হেফাজত কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু সেখানেও রামিতার ভাবি তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
রামিতা বলেন, “আমি বারবার বলেছি, আমার পরিবারের কাছে আমি নিরাপদ নই। তারপরও পুলিশ আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়।”
ললিতপুর জেলা পুলিশের প্রধান এসএসপি শ্যামকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, “আমরা কোনো শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পাইনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। তবে একজন মেয়ে আরেকজন মেয়েকে তুলে দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। ছেলেমেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন হতো।”
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। রামিতা জানান, তাঁর ভাবি বলেছেন, “তুই মরলেও, বিকলাঙ্গ হলেও তোকে একটা পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবই।”
এমনকি তাঁকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে এই ‘সমকামীতা’ দূর করারও পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তবে তাঁর ঋতুস্রাব চলায় আপাতত তা স্থগিত রয়েছে।
শিলু বলেন, “আমি এখন যোগাযোগই করতে পারি না রামিতার সঙ্গে। সে একপ্রকার বন্দি অবস্থায় আছে। আমরা খুব ভয় পাচ্ছি।”
এ ঘটনায় মানবাধিকার কর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
প্রাক্তন সাংবিধানিক পরিষদ সদস্য ও মায়াকো পরিচয় নেপাল-এর নির্বাহী পরিচালক সুনীল বাবু পন্ত বলেন, “এটি একটি রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত অপহরণ। এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার চেয়ে অনেক বড়, এটি রাষ্ট্রের উদাসীনতার প্রমাণ।”
২০২৩ সালের রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে সমকামীদের জন্য আলাদা বিবাহ নিবন্ধন বই তৈরির নির্দেশ দেয়। এরপর কয়েকটি দম্পতির বিয়ে নিবন্ধনও হয়েছে।
তবু স্থানীয় প্রশাসনের অনীহা ও পুলিশের আচরণ দেখিয়ে দেয়, মাঠপর্যায়ে এই আইন এখনো কার্যকর নয়।
রামিতা বলেন, “আইন তো আছে। তাহলে এত কঠিন কেন? কেন পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন আমাদের বুঝতে পারল না?”
মায়াকো পরিচয় নেপাল কর্তৃপক্ষ দুটি তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে এবং পুলিশের ভূমিকায় তদন্ত চেয়েছে।এখন শিলু কেবল অপেক্ষায় আছেন, তাঁর সঙ্গিনীকে আবার ফিরে পাওয়ার আশায়।