Home সারাদেশ কিস্তি বাকি, রাতের অন্ধকারে অফিসেবন্দি নারী

কিস্তি বাকি, রাতের অন্ধকারে অফিসেবন্দি নারী


বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: রাত নামছিল ধীরে ধীরে। বাজারের দোকানপাটে বাতি জ্বলছিল একে একে। কিন্তু জীবননগরের পল্লী উন্নয়ন বোর্ড অফিসের বারান্দায় তখন এক নারী কেবল অন্ধকারে বসে ছিলেন, তার গায়ে তালাবদ্ধ এক সমাজের নির্দয়তা। শুধু কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় তাকে এই অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এই ঘটনা ঘটে জীবননগর উপজেলা সদরের বিআরডিবি কার্যালয়ে। ভুক্তভোগী নারীর নাম নুরনাহার খাতুন, বয়স ৪৭, তিনি বাঁকা গ্রামের বাসিন্দা। অসুস্থ শরীরে অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে যান অফিসে, আরও কিস্তির টাকা পরিশোধের আশায়। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করায় মাঠকর্মী আবেদা সুলতানা তাকে অফিসের বারান্দায় তালাবদ্ধ করে রেখে নিজের বাসায় চলে যান বলে অভিযোগ।

নুরনাহার খাতুন বলেন, “আমি তাকে বারবার অনুরোধ করেছি, আমার শরীর ভালো না, একটু সময় দিন। তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু সে শুনলো না। আমাকে অন্ধকারে তালা মেরে রেখে চলে গেল। এটা এক নারীর জন্য কী রকম অসম্মানজনক হতে পারে, তা কেউ বোঝে না।”

তাঁর চোখের কোণে জল। গলার স্বর কাঁপছিল অপমান আর অসহায়তার ভারে।

মাঠকর্মী আবেদা সুলতানা অবশ্য দাবি করেন, নুরনাহার খাতুনের কাছে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওনা আছে। তিনি বারবার কিস্তি বকেয়া রেখেছেন। অফিস ওই বকেয়া নিজের বেতন থেকে কেটে নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

“আমি শুধু তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চয়তা চাইছিলাম,” বলেন আবেদা। “তাই বাইরে অপেক্ষা করতে বলি। কিন্তু তালাবদ্ধ করে রাখার ইচ্ছে আমার ছিল না।”

পরে স্থানীয়দের চোখে পড়ে বারান্দায় বন্দি অবস্থায় কাঁদতে থাকা নারী। তারা পুলিশে খবর দিলে জীবননগর থানার একটি দল এসে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়।

জীবননগর পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা তারিক জামাল বলেন, নুরনাহার তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। মেয়াদ শেষে পুরো টাকা ফেরত দেননি। বৃহস্পতিবার তিনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে অফিসে আসেন। তবে তাকে অন্ধকারে তালাবদ্ধ রাখার বিষয়টি তার জানা ছিল না।

জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, “আমরা খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নারীকে উদ্ধার করি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই ঘটনাটি কেবল একটি অফিসের আচরণ নয়, বরং নারীকে অসম্মান করার আরেকটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, শরীরের দুর্বলতা, সমাজের অবহেলা—সবকিছু মিলিয়ে তালাবদ্ধ নুরনাহার যেন প্রতীক হয়ে উঠলেন গ্রামীণ নারীর লড়াইয়ের।