Home অন্যান্য ডিজিটাল যুগে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার শক্তিশালী কৌশল

ডিজিটাল যুগে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার শক্তিশালী কৌশল

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

আজকের যুগে দম্পতিরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরত্বে—এমনটাই বলছেন কানাডার মনোবিজ্ঞানী ড. জোডি ক্যারিংটন। তাঁর ভাষায়, “আমাদের জীবনে এত বেশি বিভ্রান্তি আর আকর্ষণীয় বিকল্প তৈরি হয়েছে যে সঙ্গীর চেয়ে স্ক্রিন বা সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো যেন সহজতর হয়ে উঠেছে।”

১৫ বছরের অভিজ্ঞ এই ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জানালেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ও ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনতে কিছু ছোট কিন্তু কার্যকর অভ্যাসই পারে বড় পরিবর্তন আনতে।

১. ঝগড়া শুরু নয়, বলুন “আরও বলো”

ড. ক্যারিংটনের মতে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েই বেশিরভাগ দম্পতির মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। যেমন—ক্লান্ত দিন শেষে বাসায় ফিরে দেখা গেল সঙ্গী থালাবাসন ধোয়নি। মুহূর্তেই শুরু হয় অভিযোগের ঝড়। কিন্তু এমন সময় রাগে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে যদি বলা যায়, “আরও বলো” বা “তুমি কী বোঝাতে চাও?”—তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে।

তিনি বলেন, “এই ছোট বাক্যটি আসলে সহানুভূতি ও বোঝাপড়ার দরজা খুলে দেয়।”

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটান, তারা চুপচাপ ক্ষোভ জমিয়ে রাখা দম্পতির তুলনায় দশগুণ বেশি সময় একসঙ্গে থাকেন।

ক্যারিংটনের মতে, “সহানুভূতি দেখানো মানে অন্যের আচরণ সমর্থন করা নয়; বরং এটি আলোচনার জায়গা তৈরি করে।”

২. প্রতিটি চুমু হোক অন্তত ছয় সেকেন্ড

“আমার স্বামী অ্যারন অফিসে যাওয়ার সময় হালকা এক চুমু আর যান্ত্রিক ‘লাভ ইউ’ বলে চলে যায়,” বলেন ক্যারিংটন। “এখন তো আমরা যৌন সম্পর্কের সময়ও ক্যালেন্ডারে ঠিক করি।”

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে দম্পতিরা মাসে গড়ে পাঁচবার যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হতেন, এখন তা নেমে এসেছে তিনবারে।

ড. ক্যারিংটনের মতে, মাত্র ছয় সেকেন্ডের একটি চুমু শরীরে অক্সিটোসিন ও ডোপামিন তৈরি করে, যা উদ্বেগ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানসিক সংযোগ বাড়ায়।

তিনি বলেন, “আমরা সময়ের অভাব, মুখে রসুনের গন্ধ বা দাঁত ব্রাশের চিন্তায় এতটাই ব্যস্ত যে সঙ্গীকে দেখারও সময় পাই না। অথচ ছয় সেকেন্ডের সেই চুমুই পারে সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে।”

৩. মুখোমুখি নয়, পিঠে পিঠে কথা বলুন

গাড়িতে বসে সন্তানদের সঙ্গে সহজে কথা বলা যায়—এই উদাহরণ টেনে ক্যারিংটন বলেন, “সব সময় মুখোমুখি হয়ে কথা বলার দরকার নেই।”

কখনো কখনো মুখোমুখি অবস্থায় চোখের ভঙ্গি, মুখের ভাব, এমনকি সামান্য এক চোখের পলকও রাগ বাড়িয়ে দিতে পারে।

তাই তিনি পরামর্শ দেন, “যদি মনে হয় সরাসরি কথা বলা কঠিন, তাহলে পিঠে পিঠে বসে কথা বলুন, কিংবা প্রয়োজনে টেক্সট করুন। এতে কথার চাপ কমে যায়, মন শান্ত থাকে।”

৪. মাঝে মাঝে চোখে চোখ রাখুন

“দম্পতির মধ্যে সরাসরি চোখে চোখ রাখা একটি শক্তিশালী মানসিক সংযোগ তৈরি করে,” বলেন ক্যারিংটন।

তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “যখন আমি আর অ্যারন চোখে চোখ রাখার অনুশীলন করি, ও ভাবে আমি নাকি চুল কেটেছি বা মেকআপ বদলেছি! আসলে এর উদ্দেশ্য হলো স্মৃতি ও ভালোবাসার মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দেওয়া।”

এই সময় তিনি ফিরে যান নিজের বিবাহদিনের কথা, কিংবা সেই হাসপাতালের রাতের কথা, যখন সন্তান জন্মের পর স্বামী তাঁর বিছানার পায়চারে ঘুমিয়েছিলেন।

ক্যারিংটনের মতে, “আমাদের জীবনের গুণগত মান নির্ভর করে সম্পর্কের গুণগত মানের ওপর। আপনি চাইলে এসব কৌশল একে একে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সব একসঙ্গে নয়—একটা দিয়েই শুরু করুন।”

ড. জোডি ক্যারিংটনের মতে, সম্পর্ক কোনো যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়; এটি প্রতিদিনের ছোট ছোট ‘মাইক্রো ইনভেস্টমেন্টে’ গড়ে ওঠে। একটু মনোযোগ, সামান্য সহানুভূতি আর ছয় সেকেন্ডের এক চুমুই পারে দূরত্ব কমাতে এবং ভালোবাসার উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে।