লিটারে দাম ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: পেঁয়াজ, চাল ও ডালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যেই বাড়তে যাচ্ছে সয়াবিন তেলের দামও। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি, গড় এলসি (ঋণপত্র) মূল্য, ইনবন্ড ও এক্সবন্ড খরচ এবং ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে এই সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কেন বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম
বিশ্ববাজারে ক্রুড সয়াবিন তেলের দাম গত এক মাসে টনপ্রতি ১,০৫০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,১০০–১,১৫০ ডলারে। ব্রাজিলে খরার কারণে উৎপাদন হ্রাস ও আর্জেন্টিনায় রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৬০ পয়সা ধরে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে বিটিটিসি। এতে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৯৮ টাকা ২৭ পয়সা হতে পারে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও ৮ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে ১৭৭ টাকা ৮৫ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ও নির্ভরতা
বাংলাদেশে বছরে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদনে মেটে মাত্র ১.২ লাখ টন, অর্থাৎ ৫ শতাংশেরও কম। বাকি ৯৫ শতাংশ আসে আমদানির মাধ্যমে।
আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন তেলের অংশ প্রায় ৭০ শতাংশ, বাকি অংশ পাম অয়েল। তেল আমদানি করা হয় মূলত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। এর মধ্যে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আসে অধিকাংশ সয়াবিন তেল, আর ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আসে পাম তেল।
২০০৫ থেকে ২০২৫: আমদানির প্রবণতা
২০০৫ সালে দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ছিল প্রায় ৮ লাখ টন, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ১৪ লাখ টন। ২০১৫ সালে আমদানি দাঁড়ায় ২০ লাখ টন, আর ২০২৫ সালে এসে পৌঁছেছে ২৫ লাখ টনে। একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানি ৩ লাখ টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টনে।
বৈদেশিক মুদ্রার চাপ
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (BTPRI) প্রধান গবেষক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “ভোজ্যতেল খাতে বছরে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশীয় তেলবীজ উৎপাদন না বাড়ালে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে।”
ভোক্তার উদ্বেগ বাড়ছে
রাজধানীর খুচরা বাজারে বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন মূল্য কার্যকর হলে তা ২০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে। পেঁয়াজ, চাল ও ডালের পর এবার তেলের দামও বাড়লে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।









