বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক ঘোষিত নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৬ টাকা বেড়ে ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মূল্য আজ, সোমবার থেকেই কার্যকর হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে, যা সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর এই নতুন মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে (আগের দাম ছিল ১৮৯ টাকা, ৬ টাকা বৃদ্ধি)। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ৯৫৫ টাকা (আগের দাম ছিল ৯২২ টাকা, ৩৩ টাকা বৃদ্ধি)। খোলা সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার মূল্য ১৭৬ টাকা (আগের দাম ছিল ১৬৯ টাকা, ৭ টাকা বৃদ্ধি) এবং খোলা পাম তেলের প্রতি লিটার ১৬৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৪ঠা ডিসেম্বর আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছিল, তবে সে সময় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এরপর রোববার আবারও বৈঠক বসে এবং সেখানেই মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণেই তাদের এই মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে।
তবে এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেও বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি, কোনো ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসায়ীরা ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছিলেন। সে সময় পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছিল ৯৬৫ টাকায়, যা এখন ৯৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে, বোতলজাত প্রতি লিটারের দাম সে সময় ১৯৮ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা এখন ১৯৫ টাকা। এই অঘোষিত মূল্যবৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে কিছুটা কম দামে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং বাজার তদারকির দুর্বল দিকটি উন্মোচন করেছে।
ভোজ্য তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। একদিকে যখন দেশের সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন ভোজ্য তেলের এই দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘আলোচনা করে’ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এলেও, এই আলোচনা কতটা জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রণালয় কি কেবল ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের অনুমোদন দিচ্ছে, নাকি ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে – সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হলেও, স্থানীয় পর্যায়ে এর প্রভাব এবং ব্যবসায়ীদের মুনাফার বিষয়টি কতটা যাচাই করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। এমতাবস্থায়, বাজার স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারের আরও জোরালো ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।










