বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে অন্তত দুই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তবে ডিএনএ নমুনায় অতিরিক্ত মিশ্রণের কারণে তাদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্যারাবন স্ন্যাপশট। টাস্কফোর্স গঠনের পর ছয় মাস তদন্ত শেষে হাইকোর্টে দাখিল করা অগ্রগতি প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বটি, ছুরির বাট এবং নিহতদের পোশাকসহ আলামতের ওপর ভিত্তি করে ২৫ জনের ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডের তিনটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোর কারও ডিএনএর সঙ্গে আলামতের ডিএনএ মেলেনি। পরীক্ষায় চারজনের ডিএনএ শনাক্ত হয়—তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। নারীটি রুনি, আর একজন পুরুষ সাগর সারওয়ার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি দুই পুরুষের পরিচয় অজানা।
এই দুই অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় জানার জন্য তাদের ডিএনএ প্যারাবন স্ন্যাপশটে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অতিমাত্রায় মিশ্রণ থাকায় প্রতিষ্ঠানটি কোনো ছবি তৈরি করতে পারেনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। পরদিন সকালে তাদের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা হয়। মামলা দায়েরের পর থানা, ডিবি ও পরে হাইকোর্টের আদেশে তদন্তভার যায় র্যাবের হাতে। দীর্ঘ ১২ বছরের তদন্তেও অপরাধী শনাক্ত করা যায়নি। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর হাইকোর্ট মামলাটি নতুনভাবে টাস্কফোর্সের হাতে তুলে দেয়।
টাস্কফোর্স বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডে পারিবারিক কলহ বা আত্মহত্যার তত্ত্বের কোনো প্রমাণ নেই। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাদের দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘটিত ডাকাতি-সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বিবরণ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। মহাখালীর চিকিৎসক নিতাই, গুলশানে এক গৃহবধূ, এবং দক্ষিণখানে এক দম্পতি হত্যার মতো ঘটনাগুলোর নেপথ্যে পেশাদার চোর বা ডাকাত জড়িত ছিল। এসব পর্যালোচনা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, হয়তো এমন কোনো চক্রই এই হত্যার পেছনে রয়েছে।
তবে টাস্কফোর্স এখনো হত্যার মূল উদ্দেশ্য এবং জড়িতদের পরিচয় নির্ধারণে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে আরও ছয় মাস সময় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবে টাস্কফোর্স।