Home অন্যান্য সাগরের বুকে মাছের ভাসমান পুকুর

সাগরের বুকে মাছের ভাসমান পুকুর

ছবি সিসিটিভি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশের জিয়াংমেনে মঙ্গলবার সফলভাবে উদ্বোধন হলো বিশ্বের প্রথম স্বচালিত গভীর সমুদ্রের মৎস্যচাষ জাহাজ। তা পরিবেশবান্ধব সমুদ্রজলের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। ‘বেই এরিয়া লিংডিং’ নামের এই জাহাজটির মাধ্যমে চীন গভীর সমুদ্রভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর ‘সাগর খামার’ শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করল।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা সিসিটিভি জানায়, জাহাজটির মৎস্যচাষ উপযোগী কক্ষের পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার ঘনমিটার, যা ৩২টি মানসম্পন্ন সুইমিং পুলের সমান। এতে মাছেরা মুক্তভাবে সাঁতার কাটতে পারবে, যা তাদের প্রাণবন্ততা বাড়াবে এবং মাছের মাংসের গুণগত মান উন্নত করবে।

১৫৫.৮ মিটার দৈর্ঘ্য, ৪৪ মিটার প্রস্থ এবং ২৪ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট এই জাহাজটি বার্ষিক ৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে, যা গুয়াংডং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর বে অঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জাহাজটির পানির নিচের কাঠামো একটি বন্ধ কক্ষ নয়, বরং ১৫টি খুঁটি দিয়ে তৈরি এক ধরনের ‘জলতল রাজপ্রাসাদ’। এর মাঝে ঝুলন্ত মাছ ধরার জালের মাধ্যমে ১২টি আলাদা চাষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে একাধিক মাছের প্রজাতি একসঙ্গে চাষ করা সম্ভব। এটি চীনের মাছ চাষের বহুমাত্রিকতা বাড়াবে।

বেই এরিয়া লিংডিং সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক চালন ব্যবস্থায় পরিচালিত হয় এবং এতে রয়েছে ২০ কিলোওয়াটের বায়ুশক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা, যা জাহাজ স্থির থাকাকালীন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

জাহাজটি উচ্চ-নির্ভুল জিপিএস ও বেইদৌ ন্যাভিগেশন সিস্টেমে সজ্জিত, যা রিয়েল-টাইম অবস্থান জানাতে পারে এবং মৎস্যচাষীদের তাৎক্ষণিক সতর্কতা ও দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

জাহাজের প্রপেলার চালিয়ে এটি ‘ক্রুজিং মোডে’ চলতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ সাগরের পরিবেশগত তথ্য ও মাছের অবস্থানের ভিত্তিতে গতি ও পথ পরিবর্তন করতে পারে। এর ফলে কোন এলাকাটি মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত, তা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

প্রতিটি চাষ কক্ষে স্বয়ংক্রিয় খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ধরনের সেন্সর যুক্ত আছে। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তাপমাত্রা বা দূষণ বেড়ে গেলে জাহাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই চেম্বারগুলোকে উপরে তুলে এনে পানি প্রতিরোধ কমিয়ে দ্রুত নিরাপদ এলাকায় চলে যেতে পারে, যাতে মাছের জীবন ও মান বজায় থাকে।

স্থির অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে জাহাজটি পর্যটকদের জন্য মাছ ধরার সুযোগ, খাবার ও আবাসন সুবিধাও প্রদান করতে পারবে, জানিয়েছে সিসিটিভি।


🔹 চীনের এই প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ কি আমাদের দেশেও সম্ভব? শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানান।