রহস্য ঘনাচ্ছে মৃত্যুর কারণ নিয়ে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় প্রবেশ করে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত এবং পরদিন সেই যুবকের মরদেহ উদ্ধার এই পুরো ঘটনার জটিলতা ও রহস্যে এখন সরগরম হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনমনে।
থানার ভেতরে আচমকা হুলস্থুল
বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযোগ জানানোর কথা বলে কথা বলতে শুরু করেন কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, কথোপকথনের একপর্যায়ে ওই যুবক আচরণে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং হঠাৎ করেই এক কনস্টেবলের কাছে থাকা রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
চিৎকার শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলী। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে যুবকটি তাঁর উপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং কপাল ও হাতে আঘাত করেন। আহত হলেও মহসিন আলী ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা মিলে রাইফেল উদ্ধার করেন, কিন্তু যুবকটি দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যান।
রহস্যময় পলায়ন এবং পুকুরে আত্মগোপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানার পাশের সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুর পাড়ে যুবকটিকে দৌড়াতে দেখা যায়। পুলিশ ও স্থানীয় জনতা তখন তাকে অনুসরণ করে পুকুরের দিকে যান। বলা হয়, তিনি কচুরিপানার ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। রাত গভীর হলে পুলিশ পুকুর পাড়ে অবস্থান করলেও সাধারণ লোকজন একসময় বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে আর তাকে দেখা যায়নি।
পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার
শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে তল্লাশি শুরু করে। সকালেই কচুরিপানার নিচ থেকে যুবকের নিথর দেহটি উদ্ধার করা হয়। তার পরিচয় জানা যায়নি, তবে বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
থানার ভেতরে অস্ত্র ছিনতাইয়ের চেষ্টা, বাইরে মৃত্যু—কী ঘটেছিল মাঝখানে?
এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেউ বলছেন, তিনি হয়তো পানিতে ডুবে মারা গেছেন, আবার কেউ সন্দেহ করছেন, পালানোর সময় তাকে কেউ আঘাত করেছে কি না। এখনো স্পষ্ট নয়, ওই যুবক মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন কি না বা তার উদ্দেশ্য আসলে কী ছিল।
সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম সাংবাদিকদের বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”
তিনি আরও জানান, আহত এএসআই মহসিন আলীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
সমাজে আতঙ্ক ও উদ্বেগ
ঘটনার পর পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, থানার মতো নিরাপত্তা-বেষ্টিত স্থানে এমন ঘটনা পুলিশি ত্রুটির ইঙ্গিত দেয় কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। অন্যদিকে, একজন অজ্ঞাত যুবকের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ মণ্ডল বলেন, “আমি নিজে দেখেছি, যুবকটি থানার পেছনের দিক দিয়ে পালিয়ে পুকুরে লুকায়। গভীর রাত পর্যন্ত সে ছিল কিনা তা বোঝা যায়নি। সকালে হঠাৎ শুনি তার মরদেহ পাওয়া গেছে। বিষয়টা অনেক রহস্যজনক।”
পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এবং তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। থানা চত্বরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।